কথামুখ
পাথরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সভ্যতার ঊন্মেষপর্বে। পাথরই তখন মানুষের একমাত্র হাতিয়ার। আগুন আর পাথরের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানুষ তার সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। প্রাচীন প্রস্তরযুগ, নতুন প্রস্তরযুগ, ধাতুযুগ পেরিয়ে ক্রমশ সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। তবু আজও পাথরের প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি। সেদিনের গুহাবাসী মানুষ আজ বহুতল গড়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে, একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে দ্রুত ধেয়ে যাবার জন্য সড়কপথ তৈরি করছে, রেলপথ থেকে আরম্ভ করে বিস্তৃত রাজপথ — সবই পাথরের বুননে সৃষ্টি হচ্ছে। গুহাবাসী মানুষ পাথরের বুকে ছবি এঁকেছে, আবার এই পাথর দিয়েই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য তাজমহল। এককথায় বলতে গেলে পৃথিবীজুড়ে পাথরের সাম্রাজ্য। পাথর আজও মানুষের চাহিদা মেটাতে অন্যতম প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ। ইটভাটা বা পাথরের খাদান ও তৎসহ পাথর-ভাঙা কল হচ্ছে আদিম শিল্পায়নের প্রথম ধাপ। পাথরের খননকার্য বা ব্যবহার করার প্রক্রিয়াতে নিযুক্ত রয়েছেন শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষ। পাথরের এই খনি থেকেই আদিম পেশাগত রোগ ‘সিলিকোসিস’-এর সৃষ্টি।
বিপর্যয়ের গোড়ার কথা
২০০৯ সাল। ‘আয়লা’ ঘূর্ণিঝড়ে ফুলেফেঁপে ওঠা নদীর জল প্রায় ১১ ফুট উঁচু হয়ে আছড়ে পড়ল সুন্দরবনের নদী-ঘেরা দ্বীপগুলোতে। তছনছ করে দিল বসত-দ্বীপ সহ মানুষের জীবনযাত্রা। আয়লা-র ঝড়ে মিনাখাঁর গ্রামে আর চাষ হয় না। মাটি নুনে ভরে গেছে। দালালের হাত ধরে ২০০৯ সালে আয়লা-র পরে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ-র গোয়ালদহ, দেবীতলা, সন্দেশখালির ১ নং ব্লকের রাজবাড়ি, সন্দেশখালি ২নং ব্লকের ঝুপখালি, জেলিয়াখালি এলাকার প্রায় দুশো জন গরিব মানুষ পেটের তাগিদে আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি এলাকায় পাথর খাদানের কাজে গেল।
বছর না ঘুরতেই ওরা অসুস্থ হয়ে পড়ল। ২০১২-তে ওরা বুঝতে পারল যে ওদের আর কাজ করার ক্ষমতা নেই। গায়ে জ্বর, ক্রমাগত মুখ দিয়ে রক্ত ওঠে, শ্বাসকষ্ট, কাশি সহ নানা উপসর্গ। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে গেলে বলা হচ্ছে, যক্ষ্মা বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। সেইমতো চিকিৎসাও করা হয়। প্রথমদিকে রোগটা ঠিকমতো ধরাই যাচ্ছিল না অনেকের ক্ষেত্রে। ২০১২ সালে প্রথম মারা যায় ওই গ্রামের হোসেন মোল্লা। চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে, এই সন্দেহে আবুল পাইক, স্মরজিৎ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, মফিজুল মোল্লাকে নিয়ে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে, প্রত্যেকেই সিলিকোসিস-এ আক্রান্ত। গ্রামে ফিরে আসার পরে ২০১৪ সালে মারা যান আবুল পাইক, ২০১৫ সালে বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং ২০১৭ সালে স্মরজিৎ মণ্ডলের মৃত্যু হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
মিনাখাঁ ব্লক-এর গোয়ালদাহ ও দেবীতলা গ্রামের (ধুতুড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েত) মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। মোট মারা গেছেন ২৬ জন। ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ১৪ জন। বাকি ১২ জন পাননি। কারণ, হাসপাতাল সিলিকোসিস রোগটি প্রথমে লিখতে চাইছিল না। অনেকে বাড়িতে মারা গেছেন। অনেকের বেলায় রোগটি চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। আলাদা করে কেউ কোন সরকারি আর্থিক সুবিধা পাননি। ২ লক্ষ টাকা পেয়েছেন ২৮ জন।
মিনাখাঁ-য় সিলিকোসিসে আক্রান্তদের ক্রমাগত মৃত্যুর ফলে কলকাতা উচ্চ আদালতে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। মাননীয় উচ্চ আদালত বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দেরিতে হলেও রাজ্য সরকার ২০২২ সালে সিলিকোসিসে আক্রান্তদের জন্য একটি নীতি ঘোষণা করে। এর আগেই রাজস্থান ও হরিয়ানা রাজ্যে সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমজীবী মানুষদের জন্য একটি সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনও নানা সময়ে নানা মত দিয়েছেন। আদেশ জারি করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সিলিকোসিস বা পেশাগত রোগে আক্রান্ত শ্রমজীবী মানুষদের জন্য রাজ্যে বা কেন্দ্রে কোনও সুনির্দিষ্ট নীতি আলোচিত বা গৃহীত হয়নি। সিলিকোসিস কেবল পাথর-ভাঙা কলে বা খাদানে কাজ করলেই যে হবে তা নয়। আরও বহু ক্ষেত্র আছে, যেখানে কাজ করলে সিলিকোসিসে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
সিলিকোসিস ছাড়াও আরও অনেক পেশাগত রোগ রয়েছে, যার কোন সমাধানই রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার করে উঠতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা হল, সিলিকোসিস বা পেশাগত রোগাক্রান্ত শ্রমিকদের চিহ্নিত করার বিষয়টিও প্রায় সরকারি উদ্যোগের বাইরেই থেকে গেছে। অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক সিলিকোসিস বা পেশাগত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ফেরেন। তারপর নিশ্চিত ও ধীর পায়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান।
রাজ্য সরকার সিলিকোসিসে আক্রান্তদের জন্য দুই লক্ষ টাকা এবং মারা গেলে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিধবা-ভাতা বা আক্রান্ত রোগীদের জন্য পেনশন, শিক্ষার সুযোগ, এমনকি অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পের সুযোগের কথাও ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই বিষয়গুলির কার্যকারিতা অত্যন্ত ক্ষীণ এবং দুর্বল। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পেতে আক্রান্তদের পরিবারকে যেভাবে এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে দৌড়াতে হয়, তার থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হয় না।
রাজ্য সরকারের সিলিকোসিস রোগ সংক্রান্ত যে নীতি রয়েছে, বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তার মধ্যে অনেক অপূর্ণতা রয়েছে। যে সব পাথর-ভাঙা কল ও খাদান থেকে সিলিকোসিস হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের আইনি পদক্ষেপ প্রায় শূন্য মার্গে। এমনকি মিনাখাঁ-য় যে সব কারখানা থেকে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিনা জানা যায় না। ‘পলিউটার টু পে’ নীতি অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণও আদায় হয়নি। যদিও রাজ্য সরকারের কাছে এই ব্যাপারে দাবি জানানো হয়েছিল।
শিল্পে দূষণ, আক্রান্ত শ্রমিক – ফিরে দেখা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ‘সুরেন্দ্র খনিজ’ নামে এক পাথর ভাঙার কারাখানা গড়ে ওঠে ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে চিচুরগেরিয়া গ্রামে। শ্রমিক হিসেবে কাজ পেলেন কাছাকাছি গ্রামের আদিবাসী মানুষজন। কয়েক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এক এক করে শ্রমিক মৃত্যুর কবলে পড়তে থাকেন। ঝাড়গ্রামের ‘টপ কোয়ার্ক সায়েন্স সেন্টার’-এর পরিবেশ কর্মী প্রয়াত বিজন ষড়ঙ্গি ব্যাপারটি নিয়ে প্রথম হইচই শুরু করেন। কিন্তু ততদিনে ১৫ জন শ্রমিক পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। বাকিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পনেরো জনের মধ্যে ছিল বিনয় হাঁসদা। বয়স মাত্র দু’বছর। মায়ের পিঠে চেপে কারখানায় যেত। সেই বিনয় চলে গেল। সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকরা তিল তিল করে কীভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে বিজন’রা ‘ওয়েট আনটিল ডেথ’ নামে এক মর্মস্পর্শী তথ্যচিত্র বানান। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিষয়টি নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দ্বারস্থ হলেন। পরে সেটি পৌঁছে গেল উচ্চ আদালতে। বিচারের রায়ে স্থির হল কারখানার দূষণে মৃত শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন এবং যাঁরা আক্রান্ত তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। সরকারকে আক্রান্ত পরিবারগুলির চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে। (Re. WRIT PETITION CIVIL NO.- 3727 OF 1985, Reg. – Nagarik Manch Matter)
অতঃকিম্
সিলিকোসিস পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশাগত রোগ। ভারতবর্ষের বুকে কত শ্রমজীবী মানুষ সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তার কোন হিসেব নেই। সিলিকোসিস-এ আক্রান্ত শ্রমজীবী মানুষ পৃথিবীজুড়ে। ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে সিলিকোসিস-এ আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আন্দোলন চলছে। ডাক্তারি শাস্ত্র অনুযায়ী সিলিকোসিস রোগের কোন চিকিৎসা নেই, মৃত্যু অনিবার্য।
পেশাগত রোগে আক্রান্তদের জন্য আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক জেলায় ভূমি রাজস্ব দপ্তর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, শ্রম দপ্তর ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলাভিত্তিক কমিটি গড়ে, সিলিকোসিস ও পেশাগত রোগাক্রান্ত মানুষদের চিহ্নিত করে, তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রত্যেক রোগাক্রান্তকে পরিচয়-পত্র দিতে হবে, যাতে তাঁরা চিকিৎসার জন্য যাতায়াতের সময় মহামান্য কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিনামূল্যে একজন সহকারীকে নিয়ে চলাফেরা করতে পারেন। বর্তমানে রেলপথে ক্যান্সার রোগাক্রান্তরা একজন সহকারীকে নিয়ে বিনামূল্য যাতায়াত করতে পারেন। ঠিক এমন সুযোগ কেন্দ্রীয়ভাবে পেশাগত নানান রোগাক্রান্ত মানুষদের জন্যও দিতে হবে। যেসব কারখানা বা পাথর-খাদানে শ্রমিকরা কাজ করেন, সেখানে প্রয়োজনীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র বসাতে হবে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিতে হবে, যা বর্তমানে প্রায় নেই বললেই চলে।
শেষে বলার, ১৯৯৬ সালে মাননীয় সর্বোচ্চ আদালত ঝাড়গ্রামের ‘সুরেন্দ্র খনিজ’-এর পাথরকলে আক্রান্ত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ ধার্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, মৃত শ্রমিকের জন্য এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ অত্যন্ত কম। ১৯৯৬ থেকে আজ ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে একজন শ্রমিক মারা গেলে বা রোগাক্রান্ত হলে যথাক্রমে চার লক্ষ বা দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নেহাতই অপ্রতুল, কারণ ১৯৯৬ সালের সোনার যে বাজার-দর ছিল, আর ২০২৪-এ তার যা দর, সেই অনুপাতে একজন মৃত বা রোগাক্রান্ত শ্রমিকের কমপক্ষে যথাক্রমে ১০ লক্ষ এবং পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিত। ১৯৯৬ সালে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা বিধানসভা বা লোকসভায় যে ভাতা পেতেন, বা সরকারি কর্মচারীরা যে বেতন পেতেন, সেই তুলনায় সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের অনুদান নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর।
সমস্ত বিষয়টি মাননীয় কলকাতা উচ্চ আদালতে জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে খালি রাজ্যভিত্তিক নয়, সমস্ত ভারতজুড়েই সিলিকোসিস বা অন্যান্য পেশাগত রোগাক্রান্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। কারখানার দূষণে বাইরের মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রথমে আক্রান্ত হয় কারখানার প্রান্তিক শ্রমিক। পেশাগত রোগে মৃত্যুর খতিয়ান পশ্চিমবঙ্গের বুকে কত, কেউ জানে না। রাজ্য সরকারের শ্রমদপ্তর থেকে প্রত্যেক বছর যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে পেশাগত রোগে কত লোক আক্রান্ত হয়, তার কোন হিসাব লেখা হয় না, কারণ ওরা সমাজে ব্রাত্য। কিছু মানুষ প্রকৃতির বুক চিরে পাথর দিতে গিয়ে ক্রমাগত রোগাক্রান্ত হবে, আর মৃত্যুর অপেক্ষা করবে, তা কিছুতেই চলতে পারে না। সত্বর এর অবসান প্রয়োজন।
বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় (পরিবেশ ও সমাজকর্মী )
চলভাষ – ৮৪২০৭৬২৫১৭
ই-মেল – biswajit.envlaw@gmail.com
এবং
রাহুল রায়, শিক্ষক ও পরিবেশ কর্মী,
চলভাষ- ৮৬১৭৭৪৫৩৪০,
ই-মেইল: rayrahul2263@yahoo.co.in
Disclaimer:
- The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
- The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s).
- All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
- No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).