You are currently viewing সিওপি-২৮ সম্মেলন এবং পরিবেশ

সিওপি-২৮ সম্মেলন এবং পরিবেশ

Share this post

প্রতিটি সংবাদপত্রে রোজ প্রকাশিত হচ্ছে দুবাই-তে সিওপি২৮ সম্মেলনে কী ঘটনা ঘটছে। এখানে রাষ্ট্রনায়করা উপস্থিত হয়েছেন। জাতিপুঞ্জের মহাসচিব চেতাবনি দিয়েছেন যে, পরিবেশ নিয়ে এখনই ভাবা না হলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়বে, যা মানুষ সহ অন্য প্রজাতির পক্ষে বিপজ্জনক হবে। আবিশ্ব উষ্ণতা যে বাড়ছে, তা নানান সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে ক্রমাগত প্রকাশিত হচ্ছে। রাষ্ট্রনায়করাও এই উষ্ণায়নকে স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন হল, যে রাষ্ট্রনায়করা স্বীকার করলেন যে উষ্ণতা বাড়ছে এবং এই সম্মেলনেও বললেন যে উষ্ণতা কমাতে হবে, তারা নিজেদের দেশে কী করছেন?

কিছুদিন আগে দিল্লিতে জি২০ সম্মেলন হল। সেখানেও পরিবেশ নিয়ে প্রসাধনী আলোচনা হল। সংগঠক দেশ হিসেবে ভারত যে বার্তাটির খসড়া প্রস্তুত করেছিলো এবং বিস্তর আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কর্মকর্তারা যে ঘোষণাপত্রটি সর্বসম্মতভাবে প্রকাশ করেন তার মধ্যে যুদ্ধ, আধিপত্যবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসাথে লো কার্বন হেলথ্ সিস্টেম এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সময়ে আবহাওয়াকে মাথায় রাখার কথাও ঘোষিত হয়েছে। অর্থনীতির ব্যলান্সড গ্রোথ পরিকল্পনার মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রতিশ্রুতিও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখানেও কিন্তু এই রাষ্ট্রনায়করা উষ্ণতা কমাতে নিজেদের দেশে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অনালোচিতই থেকে গেল।

সিওপি২৮-এ জাতিপুঞ্জের মহাসচিব এর মুখে একটি শব্দও শোনা গেল না যে, যুদ্ধই আজ পৃথিবীর পক্ষে সবচেয়ে বিপদজনক। কার্বন নিঃসরণের অন্যতম উৎস হচ্ছে যুদ্ধ ও যুদ্ধের প্রস্তুতি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় দু’বছর চলছে, ইজরাইল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ হচ্ছে, এর আগেই উপসাগরীয় যুদ্ধ হয়েছে, ভিয়েতনামে যুদ্ধ হয়েছে, দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ মানুষ দেখেছে এবং এসব যুদ্ধের জন্য প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষানিরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এতে যে উষ্ণায়ন হচ্ছে, সে কথা দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে অনুচ্চারিতই থাকল।

কার্বন নির্গমনের আরও একটি বড় কারণ হল ভোগ্যদ্রব্যের মাত্রাহীন ব্যবহার। পুঁজিপতি এবং বৃহৎ ব্যবসায়ীরা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের তাগিদে মানুষের সামনে নিত্যনতুন নয়া ভোগ্যদ্রব্যের পসরা সাজিয়ে কৃত্রিম এক চাহিদা তৈরি করছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই ভোগ্যদ্রব্যগুলি ব্যবহার করলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন বাতাসে মেশে। ভোগবাদের এই চরম অবস্থাকে আটকানো বা কমানোর কোনও উদ্যোগই চোখে পড়ছে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সিওপি২৮ সম্মেলনে উপস্থিত থেকেছেন। কিন্তু ভারত সরকারের কি পরিবেশ নিয়ে আন্তরিক কোনও ভাবনাচিন্তা রয়েছে? লক্ষ করলে দেখা যাবে, কর্পোরেটদের সুবিধার্থে করোনা-কালে পরিবেশ আইন শিথিল করা হয়েছে। হিমালয় যে অত্যন্ত ভঙ্গুর, একথা বার বার বলা সত্ত্বেও চারধাম সংযুক্ত করার প্রয়াস ও তার ফলস্বরূপ সুড়ঙ্গে ৪১ জন শ্রমিকের ১৬ দিন আটকে পড়ার মধ্য দিয়েই এই অপচেষ্টার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সরকার অনড়। একই কথা বলা যায় ভারতজুড়ে নদীসংযুক্তি নিয়েও। সমস্ত ভারতে প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ বলতে প্রায় কিছুই নেই। আমাদের রাজ্যও এ পরিস্থিতির বাইরে নয়। সমস্ত পঞ্চায়েত ও পৌর এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অতি দুর্বল ও নিচু মানের। ভারতের কোন শহরেই আজও যথাযথ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে না। অথচ প্রায় প্রতিটি শহরেই গ্রিন সিটি প্রজেক্ট চালু হলেও এখানে জলাভরাট করে বেআইনি বহুতল হচ্ছে ও গাছ কাটা পড়ছে।

জাতিপুঞ্জের প্লাস্টিক চেতাবনি উন্নত ধনী দেশেরা এড়িয়ে গিয়ে সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে। আমাজনের বৃষ্টিবন ধ্বংস করা হল। এজন্য কারা দায়ী, সে কথা এ সম্মেলনে উঠল না। বলা হল না একে ফিরিয়ে দাও। নানান সম্মেলনে দূষণ কমাতে অর্থ প্রদানের কথা ওঠে। টাকা দিলেই কি দূষণ কমানো যায়? ডলার দিলেই কি আমাজনের হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিবন ফিরবে? সম্মেলনে একবারও আলোচিত হল না সমুদ্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কথা। সমুদ্রে বেলাগাম বর্জ্য ফেলা থেকে আণবিক বিস্ফোরণ — যার যা খুশি চলছে। প্রকৃতপক্ষে এসব সম্মেলনে উন্নত ধনী দেশের রাষ্ট্রনায়করা কিছু ডলার ছড়িয়ে তাঁদের আত্মতৃপ্তি অনুভব করছেন, ঠিক যেভাবে আমাদের দেশের শিল্পপতিরা পাঁচতারা হোটেলের সম্মেলন থেকে পরিবেশ বাঁচানোর কথা নানান সংবাদমাধ্যমে জানান। আসলে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গড়ে না উঠলে এসব সম্মেলন ব্যর্থতার এক অন্যতম চিহ্নরূপেই থেকে যাবে। ১৯৭৪ সাল থেকে জাতিপুঞ্জ একটি করে পরিবেশ বার্তা দিলেও কখনোই তা কার্যকরী হল না। কিয়োটো, প্যারিস সহ নানান সম্মেলনে অনেক রাষ্ট্রনায়ক বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেননি। আশ্চর্যজনকভাবে এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জও মুখে কুলুপ এঁটে থাকে।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ভারতীয় মুদ্রায় কয়েকশো কোটি টাকা নাকি খরচ হয় এসব সম্মেলনের আয়োজনে। যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রায়ই উঠে আসে তিসরি দুনিয়ার নিদারুণ দারিদ্র্যের কথা, সেখানে এই বিশাল অঙ্কের ব্যায় কতখানি যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এবিষয়ে সহমত হয়ে এই মুহূর্তে যে বিষয়টি অতি প্রাসঙ্গিক সেটা হল, একটার পর একটা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গম্ভীর আলোচনাও হয়, তারপর কাজের কাজটা ঠিক কী হয়? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পরিবেশ সহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তোলা সমস্যাগুলির কোনটারই সমাধান তো দুরস্ত, কোনও সদিচ্ছাও দেখা গেছে কি!

এই দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে আমরা এগোচ্ছি। মানুষের ভাবনাচিন্তার ক্ষমতা রয়েছে। মানুষই পারে লোভ-লাভ-সর্বস্ব পরিবেশ-ধ্বংসকারী অর্থনীতিকে পরাস্ত করতে। আসুন, আমরা আওয়াজ তুলি, যুদ্ধ বন্ধ কর, দূষণ বন্ধ কর, পরিবেশ রক্ষা কর, মানব সভ্যতাকে রক্ষা কর। দারিদ্রমুক্ত পরিবেশবান্ধব এক সমাজব্যবস্থা আমাদের গড়ে তুলতেই হবে।

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়
চলভাষ – ৮৪২০৭৬২৫১৭
ই-মেল – biswajit.envlaw@gmail.com

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply