মানুষ যেদিন তার দু’হাতকে ভূমি থেকে মুক্ত করে নিতে পেরেছিল, সেদিন থেকেই সভ্যতার জন্ম। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে ভয় পেয়েছে, ভক্তি করেছে আবার ভালোবেসেছে। সভ্যতার যত অগ্রগতি ঘটেছে, প্রকৃতি ততই নিষ্ঠুরভাবে দলিত হয়েছে তারই সন্তান মানুষের হাতে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা যে অত্যন্ত জরুরি – এই চিন্তাভাবনা মানুষের মনে উদয় হলেও, সেই চিন্তার সুষ্ঠু প্রয়োগ আজও ঘটেনি। সামাজিক, অর্থনৈতিক কারণেই আইনের জন্ম হয়। আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে প্রথম পরিবেশ রক্ষার্থে আইন সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের সময়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের জোয়ার তখন সমস্ত বঙ্গদেশ জুড়ে। তারই অলক্ষ্যে ‘বেঙ্গল স্মোক্ নুইসেন্স অ্যাক্ট’-এর জন্ম হয়েছিল কলকাতা শহরতলিতে মূলত অধুনা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের শুভ্রতাকে রক্ষা করতে। ইংরেজরা আমাদের দেশে এসেছিল রাজত্ব করতে, সেবা করতে নয়। সুতরাং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারে তাদের বিশেষ কোনও দায় বা দায়িত্ব ছিল না। লাভ-লোকসান হিসাবের মধ্যেই তাদের সমস্ত চিন্তাভাবনা নিহিত ছিল। ইংরেজ শাসনের অবসানের পর পরিবেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার আগেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগ, বৈদেশিক আক্রমণ, জাতপাতের লড়াই ও বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যা নিয়ে আমাদের জর্জরিত থাকতে হয়েছে যা আজও প্রকটভাবে জীবন্ত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হয়েছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে শিল্পায়নের দিকে নজর দিলেও শিল্পায়নজনিত প্রকৃতির যে ক্ষয়ক্ষতি হবে সে ব্যাপারে কোনও চিন্তাভাবনা পরিকল্পনাতে স্থান পায়নি। অর্থাৎ সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়নি। ফলে সত্তর দশকের প্রথমে সুনির্দিষ্ট পরিবেশ রক্ষার্থে কোনও আইন জন্ম নেয়নি।
১৯৭২ সালের জুন মাসে সুইডেনের স্টকহোমে মানব পরিবেশ বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের যে সম্মেলন হয় তার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম ছিল ভারতবর্ষ । এই সম্মেলনের ফলে পরিবেশ রক্ষার্থে একাধিক আইন প্রণয়ন করা হয় যার মধ্যে সর্বপ্রথম হল জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৪। ১৯৭৪ সালের আগে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আইনগত বাধ্যবাধকতা প্রায় কিছুই ছিল না। ১৯৭৪ সালে জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণীত হওয়ার পর এর পরিপূরক হিসাবে ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠিত হয়। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। পরবর্তীকালে ১৯৮২ সালের জুন মাসে এই পর্যদ নবগঠিত পরিবেশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরিবেশ সংক্রান্ত নিম্নলিখিত আইন, নিয়মাবলি ও প্রজ্ঞাপন কার্যকরী হয়েছে এবং পরিবেশ বিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এগুলি রূপায়ণের জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
আইন
* জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৪
* জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) উপকর আইন, ১৯৭৭
* বায়ু (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮১
* পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬
*গণ দায়বদ্ধতামূলক বিমা আইন, ১৯৯১
* জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনাল আইন, ১৯৯৫
* জীববৈচিত্র্য আইন, ২০০২
* পশ্চিমবঙ্গ বৃক্ষ (বনাঞ্চল ব্যতীত স্থানে সুরক্ষা ও সংরক্ষণ) আইন, ২০০৬
* পশ্চিমবঙ্গ ভূগর্ভস্থ জলসম্পদ (পরিচালন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রনিয়ম) আইন, ২০০৬
* পূর্ব কলকাতা জলাভূমি (সংরক্ষণ ও পরিচালন) আইন, ২০০৬
নিয়মাবলি
* জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) নিয়মাবলি, ১৯৭৪
* বায়ু (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) নিয়মাবলি, ১৯৮১
* পরিবেশ (সংরক্ষণ) নিয়মাবলি, ১৯৮৬
* ক্ষতিকর বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন) নিয়মাবলি, ১৯৮৯
* ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন, মজুতকরণ এবং আমদানিকরণ নিয়মাবলি, ১৯৮৯
* বিপজ্জনক অণু জীবসত্তা ও জিনতত্ত্ব বিষয়ক পরিকল্পনাকারী জীবসত্তা বা জীবকোষ উৎপাদন, ব্যবহার, আমদানি ও রপ্তানি সংরক্ষণ নিয়মাবলি, ১৯৮৯ * চিকিৎসাজনিত জৈব বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন) নিয়মাবলি, ১৯৯৮
* রাসায়নিক দুর্ঘটনা (জরুরিকালীন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিকরণ এবং প্রতিক্রিয়া) নিয়মাবলি, ১৯৯৬
* নবীকৃত প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়মাবলি, ১৯৯৯
* শব্দদূষণ (প্রনিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ) নিয়মাবলি, ২০০০ * পৌরবিষয়ক কঠিন বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার)
নিয়মাবলি, ২০০০
* ওজোন নিঃশেষিত সারবস্তু (নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবিধান) নিয়মাবলি, ২০০০
প্রজ্ঞাপন
* পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন ঘোষণা প্রজ্ঞাপন, ১৯৯২ * উপকূলীয় প্রবিধান অঞ্চল (সি. আর. জেড.) সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, ১৯৯৯
* তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছাই ব্যবহার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, ১৯৯৯
জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৪
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪ : দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের গঠন পদ্ধতি।
ধারা নং ২৫: কোনও শিল্প সংস্থা অথবা পৌর সংস্থা যার তরল বর্জ্য নিষ্কাশিত হয় তাকে স্থাপন এবং পরিচালনা করার জন্য পর্যদের অনুমতি নিতে হবে।
ধারা নং ২৭ : এই ধারায় পর্যদের অনুমতি নাকচ করা এবং দেওয়া অনুমতি ফিরিয়ে নেবার ক্ষমতা রয়েছে।
ধারা নং ৩৩এ: এই ধারায় শর্তগুলি না পূরণ করার জন্য শিল্পসংস্থার শাস্তির পরিমাপ ঘোষণা করা আছে যার জেলের শাস্তির মেয়াদ ছয় মাসের কম হবে না এবং জরিমানা সহ ছয় বছর শাস্তি হতে পারে।
ধারা নং ৪৪ : এই ধারায় বিনা অনুমতিতে তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শাস্তি বিধানের জন্য আদালতে মামলা করার ক্ষমতা পর্ষদকে দেওয়া আছে।
জল (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৭
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় : ধারা নং ৩: স্বায়ত্তশাসিত ও তালিকাভুক্ত শিল্প সংস্থাগুলির
এই আইনের বলে পরিমাপিত উপকর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
ধারা নং ৫ : এই ধারায় তালিকাভুক্ত শিল্প সংস্থার এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির নির্দিষ্ট ফর্মে জল ব্যবহারের পরিমাপ অনুযায়ী অর্থ প্রদান এবং হিসাব দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
ধারা নং ১০: এই ধারা অনুযায়ী প্রদেয় উপকর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দিলে, নির্দিষ্ট অঙ্ক অনুযায়ী শিল্প সংস্থাগুলির সুদ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
ধারা নং ১১ঃ এই ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা পর্ষদের আছে।
ধারা নং ১৪ : এই ধারা অনুযায়ী জল ব্যবহারের সঠিক হিসেব দাখিল না করলে এবং উপকর প্রদান না করলে শাস্তি বিচারের কথা বলা আছে যার জেলের মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে এবং এক হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
বায়ু (দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮১
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ২১: কোনও শিল্পসংস্থা স্থাপন এবং পরিচালনা করার জন্য পর্ষদের অনুমতি অবশ্যই গ্রহণীয় ।
ধারা নং ২২: কোনও ব্যক্তি সাময়িকভাবে পর্যদের সঙ্গে যুক্ত হলে তার ফি, ভাতা প্রভৃতি এই ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
ধারা নং ৩১এ : এই ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিল্প সংস্থাকে বন্ধ করার এবং সংস্থার জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আদেশ দেওয়ার অধিকার পর্ষদকে দেওয়া আছে।
ধারা নং ৩৭ এবং ৩৯ : এই ধারাগুলি অনুযায়ী, ধারা ২১ এবং ২২ নম্বরের শর্তগুলি পূরণ না করার জন্য আইন মোতাবেক শাস্তির পরিমাপ ঘোষণা করা আছে।
পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৫ : এই ধারায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত ক্ষমতানুযায়ী রাজ্য সরকারের এবং পর্ষদের শিল্প সংস্থাগুলিকে বন্ধের আদেশ দেওয়া এবং তার জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
ধারা নং ১৫ : এই আইনের বিধানগুলি সঠিকভাবে প্রযোজ্য না হলে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
ধারা নং ২৫ : এই ধারায় পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬ আইনের ধারাগুলিকে বলবৎ করার নিমিত্ত বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা পর্ষদকে দেওয়া আছে।
ক্ষতিকর বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার) নিয়মাবলি, ১৯৮৯
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৫: ক্ষতিকর বর্জ্য নিষ্কাশনকারী সংস্থা সমূহকে অবশ্যই পর্ষদের অধিকার প্রদানপত্র নিতে হবে।
ধারা নং ১১ : বিদেশ থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য আমদানি করতে হলে পর্ষদের অনুমোদন মোতাবেক কেন্দ্রীয়
সরকারের অনুমতিপত্র নিতে হবে।
ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন, মজুতকরণ ও আমদানিকরণ নিয়মাবলি, ১৯৮৯
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৫ : দুর্ঘটনাকালে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন, মজুত এবং আমদানিকারী শিল্প সংস্থাকে যথাযথ বিভাগীয় আধিকারিককে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।
ধারা নং ৭ : এই ধরনের শিল্পসংস্থা যদি প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী তার অধিষ্ঠানগত প্রতিবেদন যথাযোগ্য অধিকার ও আধিকারিককে উৎপাদন শুরু করার তিন মাস আগে না জানায় তবে সেই সংস্থা এই সকল রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে কাজ করতে পারবে না।
গণ দায়বদ্ধতামূলক বিমা আইন, ১৯৯১
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪: এই ধারায় দুর্ঘটনায় শিল্পসংস্থার দায়বদ্ধতার কথা বলা হয়েছে।
চিকিৎসাজনিত জৈব বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার) নিয়মাবলি, ১৯৯৮
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪ : এই সমস্ত বর্জ্য ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি
প্রক্রিয়ায় সমস্ত প্রকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির কর্তব্যের কথা উল্লেখ আছে।
ধারা নং ৫ : এই সমস্ত বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তিকরণ প্রক্রিয়ার সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে।
ধারা নং ৬ : এই সমস্ত বর্জ্যের পৃথকীকরণ, প্যাকেজিং, স্থানান্তরকরণ ও মজুতকরণ প্রক্রিয়ার সম্পর্কে উল্লেখ আছে।
ধারা নং ৮ : এই বিধি অনুযায়ী এই প্রকার বর্জ্য উৎপাদনকারী চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির পর্ষদের কাছ থেকে যথাযথ অনুমোদন এবং ভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক।
নবীকৃত প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়মাবলি, ১৯৯৯
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪ : এই বিধিবলে নবীকৃত প্লাস্টিক দ্বারা উৎপাদিত ক্যারিব্যাগে কোনও খাদ্য দ্রব্য বহন করা নিষিদ্ধ।
ধারা নং ৫ : এই বিধিতে নতুন এবং নবীকৃত প্লাস্টিক দ্বারা নির্মিত যে কোনও ক্যারিব্যাগ ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু হতে পারবে না।
শব্দদূষণ (প্রনিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ) নিয়মাবলি, ২০০০
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪ : এই বিধি অনুযায়ী জেলাশাসক এবং পুলিশ আধিকারিকদের মাইকে শব্দদূষণ এবং তার নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বের কথা বলা আছে।
পৌরবিষয়ক কঠিন বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহার)নিয়মাবলি, ২০০০
প্রধান বিধিগুলি যা দিয়ে এই আইনটি বলবৎ হয় :
ধারা নং ৪ : এই বিধিতে পৌর সংস্থাগুলির করণীয় উল্লেখ আছে।
ধারা নং ৬ : এই বিধিতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের করণীয় দায়িত্বের উল্লেখ আছে।
পৌর আইনে, ১৯৯৩-এর পরিবেশ সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা
জলদূষণ সংক্রান্ত ধারা
ধারা ২৫৭ : পৌর নর্দমায় অবৈধ প্রবেশ।
ধারা ৩৩৩ : মশক বিস্তার নিরোধ।
ধারা ৩৩৯ : অনুমোদিত স্থানে ধোপা কর্তৃক ধৌতকরণের বিরুদ্ধে বিধান।
ধারা ৩৪০ : সরকারি বা ব্যক্তিগত পুকুরের জল ঘোলাটে করা নিষিদ্ধকরণ।
ধারা ৩৪৯ : পায়খানা ইত্যাদি মেরামত, পরিবর্তন, অপসারণ, পুনর্গঠন করবার ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৪ :দালান, পুকুর, জলাশয় বা কূপ জীবাণুমুক্ত করতে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৮ : কূপ এবং পুকুর ইত্যাদির ওপর নিয়ন্ত্রণ।
ধারা ৩৬১ : সংক্রামিত ব্যাধি দ্বারা খাদ্য ইত্যাদি প্রস্তুত বা বিক্রয় অথবা কাপড় ধৌতকরণ নিষিদ্ধ।
পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত ধারা
ধারা ২০২ : পরিবেশগত কারণে কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় বিশেষ উদ্দেশ্যে বাড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা।
ধারা ২৬০ : কঠিন বর্জ্যের আহরণ, অপসারণ এবং
বিনাশকরণ।
ধারা ২৬১ : কঠিন বর্জ্যের সাময়িকভাবে জমা করবার জন্য কোনও আধার, স্থান বা পাত্র স্থাপন।
ধারা ২৬২ : মালিক দখলকারের দায়িত্ব হবে আবর্জনা সংগ্রহ এবং জমা রাখা।
ধারা ২৬৩ : পৌরসভা রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখবে এবং কঠিন বর্জ্যের অপসারণ করবে।
ধারা ২৬৪ : কঠিন বর্জ্য পদার্থ পৌরসভার সম্পদ হবে।
ধারা ২৬৫ : কঠিন বর্জ্য অপসারণের জন্য উপযুক্ত যানবাহন এবং অন্য পন্থা নির্ধারণ।
ধারা ২৬৬ : অনাবাসিক স্থানে স্তূপীকৃত কঠিন বর্জ্যের অপসারণ।
ধারা ২৬৭ : কঠিন বর্জ্য ফেলবার জন্য স্থান নির্ধারণ।
ধারা ২৬৮: কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং নিষ্পত্তিকরণ।
ধারা ২৬৯ : কতিপয় স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ধারা ২৭০: কঠিন বর্জ্য জমানো নিষিদ্ধকরণ।
ধারা ২৭১: দোষী সম্পর্কে অনুমান।
ধারা ২৭২ : এই আইনের পরিপন্থী কোনও কঠিন বর্জ্য জমানো বা নিক্ষেপ করা।
ধারা ২৭৩ : পৌরসভার কতিপয় স্থানে ঝাড়ু দেবার এবং পরিষ্কার করার ক্ষমতা।
ধারা ২৭৮ ব্যক্তিগত বাজার এবং কষাইখানা ।
ধারা ২৮১ : মাংস, মাছ এবং মুরগি বিক্রয়ের জন্য বিশেষ পৌর লাইসেন্স।
ধারা ২৮২ : পণ্যদ্রব্য ফেরি করবার জন্য পৌর লাইসেন্স।
ধারা ২৮৩ : কোনও স্থানে বেআইনিভাবে পশু ইত্যাদি বলি হবার সন্দেহ হলে তা পরিদর্শন করবার ক্ষমতা।
ধারা ৩২৮ : বিপজ্জনক বৃক্ষের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন।
ধারা ৩২৯ : বিপজ্জনক পুকুর, কূপ, গর্ত ইত্যাদির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ।
ধারা ৩৩০ : বিপজ্জনক পাথরখাদান বন্ধ করবার ক্ষমতা ।
ধারা ৩৩২ : কাউন্সিলারের পর্ষদের অনুমতি ব্যতীত কূপ, পুকুর ইত্যাদি খননে বাধা ।
ধারা ৩৩৩ : মশক বিস্তার নিরোধ।
ধারা ৩৩৫ : অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তিগত পুকুর বা পানীয় জলের জন্য ব্যবহৃত কূপ পরিচ্ছন্ন করা।
ধারা ৩৩৬ : সরকারি কূপ বা আবদ্ধ জল অপসারণের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কর্তব্য।
ধারা ৩৩৭ : সরকারি জলাশয়, পুকুর ইত্যাদিতে পশু বা কাপড়চোপড় ধোওয়া এবং মৎস্য শিকাররোধের ব্যবস্থা বা বিধানকরণ।
ধারা ৩৩৮ : সরকারি পায়খানা এবং শৌচাগার।
ধারা ৩৩৯ : অনুমোদিত স্থানে ধোপা কর্তৃক ধৌতকরণের বিরুদ্ধে বিধান।
ধারা ৩৪০ : সরকারি বা ব্যক্তিগত পুকুরের জল ঘোলাটে করা নিষিদ্ধকরণ।
৩৪৩ : আবর্জনাকে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
ধারা ৩৪৪: অনুমতিপত্র ব্যতীত কোনও পশু, পাখি ইত্যাদির জন্য কোনও বাড়ি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
ধারা ৩৪৫ : কতিপয় পশু বা পাখি জব্দকরণ।
ধারা ৩৪৬ : রোগ সংক্রামিত কুকুর বা পশু অপসারণের ক্ষমতা।
ধারা ৩৪৭: বাড়ির মধ্যে পশু রক্ষণজনিত উৎপাত বন্ধ করবার ক্ষমতা।
ধারা ৩৪৮ : খাটাল নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণ।
ধারা ৩৪৯ : পায়খানা ইত্যাদি মেরামত, পরিবর্তন, অপসারণ বা পুনর্গঠন করবার ক্ষমতা।
ধারা ৩৫০ : দূষণজনিত উৎপাত বন্ধ করবার ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৪ : দালান, পুকুর, জলাশয় বা কূপ জীবাণুমুক্ত করতে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ।
ধারা ৩৫৫ : জীবাণুমুক্ত দালান, কাঠামো, কুঁড়েঘর বা ছাউনি ধ্বংসকরণে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৬ : বাসস্থান বা খাবার গৃহ বন্ধকরণে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৭ : মাছ, মাংস, খাদ্য, পানীয়, দ্রবাদি বিক্রয়ে সীমিত বা নিষিদ্ধকরণে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা।
ধারা ৩৫৮ : কূপ এবং পুকুর ইত্যাদির ওপর নিয়ন্ত্রণ।
ধারা ৩৫৯ বিপজ্জনক বা মহামারির প্রাদুর্ভাব রোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা।
ধারা ৩৬১ : সংক্রামিত ব্যাধি দ্বারা খাদ্য ইত্যাদি প্রস্তুতি বা বিক্রয় বা কাপড় ধৌতকরণ নিষিদ্ধ ।
ধারা ৩৬২ : বিপজ্জনক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কর্তব্য।
পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৭৩-এর পরিবেশ সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা
ধারা ২৬: দূষিত জলের সরবরাহ সম্পর্কে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা
যে সমস্ত বেসরকারি জলপ্রবাহ, প্রস্রবণ, পুষ্করিণী, কূপ বা অন্য কোনও জলাধারের জল পান বা রন্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, গ্রাম পঞ্চায়েত তার মালিক বা নিয়ন্ত্রণকারীকে দূষণ রোধে তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনার পর, লিখিত নোটিশ দিয়ে ন্যায়সঙ্গত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন। আদেশ পালনে অবহেলা হলে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে অনধিক ২৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন।
ধারা ২৮ : মহামারির প্রাদুর্ভাবে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রয়োগ
মহামারির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার জন্য বিনা নোটিশে যে-কোনও সময় পানীয় জল নেওয়া বা ব্যবহার করা যায় এমন কূপ, পুষ্করিণী বা অন্য স্থান পরিদর্শন করতে এবং তাকে সংক্রমণ। দোষমুক্ত করতে এবং ওইরূপ স্থান থেকে জল নেওয়া বা ব্যবহার বন্ধ করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
ধারা ২৯: কোনো ব্যক্তির গ্রাম পঞ্চায়েত প্রদত্ত আদেশ বা আপিল আদেশ পালনে অবহেলার কারণে পঞ্চায়েত কর্তৃক সম্পাদিত কার্যের দরুন ব্যয়ভার আদায় ।
ধারা ১৯ : গ্রামপঞ্চায়েতের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা, পানীয় জল সরবরাহের উৎসগুলি বা জলাধারগুলি যাতে দূষিত না হয়, তার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা।
ধারা ২১ : গ্রাম পঞ্চায়েতের বিবেচনা প্রসূত কর্তব্যের মধ্যে পড়ে কূপ/পুকুর/ জলাশয় খনন এবং অস্বাস্থ্যকর নিচু জমি ভরাট ও অস্বাস্থ্যকর স্থানকে স্বাস্থ্যকর করা।
ধারা ২৩: গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রাধিকারের এলাকায় নতুন পাকা গৃহ নির্মাণের সময় শুষ্ক স্বাস্থ্যকর শৌচাগার নির্মাণের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ধারা ২৫: সরকারি রাস্তা এবং জলপথ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু ক্ষমতা নিম্নে বর্ণিত হল।
* রাস্তার উভয় পার্শ্বে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ ।
* সরকারি রাস্তার ওপর এসে পড়া বেড়া গাছ বা ডালপালা ছেঁটে দেওয়া।
* জল সরবরাহের উৎসটি একটি সরকারি নোটিশ দিয়ে পৃথক করে রাখতে এবং স্নান, কাপড় কাচা বা অন্যান্য ব্যবহার দ্বারা উক্ত উৎসটি যাতে কলুষিত হতে না পারে, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা।
ধারা ১১৪: রাজ্য সরকার ইচ্ছা করলে স্থানীয় বা বিশেষ আইনের কিছু ক্ষমতা গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির ওপর ন্যস্ত করতে পারে।
ধারা ১১৭ : কোনও জমির মালিক হাট বা বাজার বানানোর ইচ্ছা করলে কিংবা হাট বা বাজার পরিচালনা করছেন এমন মালিক উপযুক্ত ফি পঞ্চায়েত সমিতিকে জমা দিয়ে উপযুক্ত অনুমতির জন্য আবেদন করবেন এবং পঞ্চায়েত সমিতি নির্ধারিত শর্তে তা মঞ্জুর করে অনুমতি দিতে পারবেন।
ধারা ১৫৭: জেলা পরিষদ কোনও ব্যক্তি বা অন্য কর্তৃপক্ষের যে কোনও রাস্তা, সেতু, পুকুর, খেয়াঘাট, কুয়ো, খাল, নর্দমা সম্মতি সূত্রে শর্ত বিশেষে সেগুলি স্বীয় পরিচালন ও কর্তৃত্তাধীনে নিতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কিছু বিশেষ বিধিনিষেধ
শিল্পে অবস্থানগত নীতির প্রয়োগ
পশ্চিমবঙ্গে যে কোনও শিল্পস্থাপন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয়। যে কোনও নতুন শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে পর্ষদের কাছ থেকে ‘স্থাপনের ছাড়পত্র’ (কনসেন্ট টু এস্ট্যাব্লিশ) নিতে হয়। একইভাবে যে কোনও শিল্প চালু করার আগে পর্ষদের কাছ থেকে ‘চালনের ছাড়পত্র’ (কনসেন্ট টু অপারেট) নিতে হয়। দূষণমাত্রার সম্ভাবনা অনুযায়ী শিল্পগুলিকে চারটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে —লাল, কমলা, সবুজ ও অব্যাহতি। অব্যাহতি শ্রেণি ব্যতীত অন্য সমস্ত শ্রেণির অন্তর্গত সকল শিল্প স্থাপনের জন্য পর্ষদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। অব্যাহতি শ্রেণির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত, পৌরসভা অথবা অন্যান্য স্থানীয় সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিলেই চলবে। পঞ্চয়েতের ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ’ সমিতিকে এই সকল প্রকার ছাড়পত্র দেওয়ার পূর্বে শিল্প সংস্থাগুলির অবস্থান এবং কার্যকলাপ সম্বন্ধে যথাযথ অনুসন্ধান করতে হবে।
পর্ষদের শিল্পে অবস্থানগত নীতির প্রয়োগ
শ্রেণিকরণ ও বিধি
লালঃ কলকাতা মেট্রোপলিটান এরিয়ার পুরসভায় শিল্পসংস্থা নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
কমলাঃ শিল্পতালুক এলাকা ছাড়া, কলকাতা এবং হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকায় শিল্পসংস্থার নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
সবুজঃ যে কোনও এলাকায় স্থানীয় আধিকারিককে (পঞ্চায়েত, পৌরসভা বা অন্যান্য স্থানীয় সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষ) এর জন্য যথাযথ দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অব্যাহতিঃ যে কোনও এলাকায় স্থানীয় আধিকারিকের (পঞ্চায়েত, পৌরসভা বা অন্যান্য স্থানীয় সংস্থা) অনুমোদন সাপেক্ষ।
উপরিউক্ত লাল, কমলা ও সবুজ শ্রেণিভুক্ত শিল্প সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাবার পরই পর্ষদের কাছে ছাড়পত্র নেবার জন্য আবেদন করা যাবে। অব্যাহতি শ্রেণির ক্ষেত্রে পর্ষদের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে না।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ
মানুষের অদূরদর্শী ক্রিয়াকলাপই শব্দদূষণের প্রধান কারণ। নগরায়ণ, শিল্পের প্রসার, প্রযুক্তির প্রগতি, পরিবহনের প্রসার এবং মানুষের জীবন প্রণালীতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনই সুরবর্জিত শব্দদূষণের কারণ। আধুনিক মানব সভ্যতার উপজাত হিসেবে শব্দদূষণ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে প্রধান পরিবেশ দূষক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এলাকার কোড ও এলাকার শ্রেণিকরণ এবং শব্দদূষণের নির্ধারিত শব্দমাত্রা
এ (শিল্প এলাকা)– নির্ধারিত শব্দমাত্রা দিবা সময় ৭৫ ডেসিবেল, রাত্রি সময় ৭০ ডেসিবেল।
বি (বাণিজ্যিক এলাকা)—
নির্ধারিত শব্দমাত্রা দিবা সময় ৬৫ ডেসিবেল, রাত্রি সময় ৫৫ ডেসিবেল।
সি (বসতি এলাকা)—
নির্ধারিত শব্দমাত্রা দিবা সময় ৫৫ ডেসিবেল, রাত্রি সময় ৪৫ ডেসিবেল।
ডি (শব্দনিষেধ এলাকা)—
নির্ধারিত শব্দমাত্রা দিবা সময় ৫০ ডেসিবেল, রাত্রি সময় ৪০ ডেসিবেল।
মন্তব্য
ক. দিবা সময় সকাল ছয়টা থেকে রাত্রি দশটা পর্যন্ত।
খ. রাত্রি সময় রাত্রি দশটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত।
গ. হাসপাতাল, শিক্ষাকেন্দ্র বা আদালতের একশো মিটারের ভেতরের এলাকাকে শব্দনিষেধ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যোগ্য কর্তৃপক্ষ দ্বারা শব্দনিষেধ এলাকা ঘোষিত হয়।
ঘ. মিশ্র শ্রেণির ক্ষেত্রে যোগ্য কর্তৃপক্ষের দ্বারা উপরিউক্ত শ্রেণিগুলির মধ্যে একটি ঘোষিত করা হবে এবং সেক্ষেত্রে তার নির্ধারিত মান প্রযোজ্য হবে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু বিশেষ নির্দেশিকা
* উৎসবের আনন্দকে বজায় রাখতে নিয়ম মেনে সাউন্ড লিমিটার সহ মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হবে।
* শব্দবর্জিত অঞ্চলে কোনো প্রকার শব্দদূষণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত ও হাসপাতালের চারিদিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকা শব্দবর্জিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে হর্ন বাজানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
* শব্দবর্জিত এলাকা হবার দরুন কলকাতার রাজভবনের ১০০ মিটারের ভেতরে শব্দদূষণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানা আবশ্যিক।
* নির্ধারিত সময়সীমা এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যাবে না। রাত নয়টার পর ও সকাল ছটার আগে মাইক্রোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ।
* উচ্চ বিস্ফোরক শব্দযুক্ত বাজি বা পটকার (চকলেট বোম, দোদোমা, কালিপটকা প্রভৃতি) উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ।
* উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (১৫ কে.ভি.এ. ক্ষমতার বেশি) ডিজেল জেনারেটর সেট পর্ষদের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
* ৫ কে.ভি.এ. ক্ষমতার বেশি ডিজেল জেনারেটর সেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দ নিয়ন্ত্রক বেষ্টনি ব্যবহার করা আবশ্যিক।
* যানবাহনে এয়ার হর্ন তৈরি, ব্যবহার, বিক্রয় এবং মজুত আইনত নিষিদ্ধ।
* সুন্দরবন বা পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চলগুলিতে লাউডস্পিকার বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যাবে না।
* সার্বিক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সজাগ থাকা দরকার।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ
প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, যত্রতত্র পাতলা প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে দেওয়ার কুফল বাড়ির বাইরে পা রেখে সামনের নর্দমার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। পাতলা ব্যাগ বন্ধ করেছে নিকাশি নালার মুখ। ময়লা জলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। এই পাতলা প্লাস্টিকের ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীয় আইন এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশ বলবৎ রয়েছে। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং উপযুক্ত বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু বিশেষ বিধি নির্দেশিকা নিম্নে বর্ণিত হল।
• বেআইনি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ (৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্ব ও ১২” × ১৬” থেকে ছোট) প্রস্তুতকারক সংস্থা বা হোলসেল মজুতদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। এইসব ব্যাগগুলির তৈরি, বিক্রয়, বিতরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ।
• প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধকরণের যে আদেশ বলবৎ আছে ৬৬— পার্বত্য অঞ্চলে, সুন্দরবন সহ বনাঞ্চল, দিঘা সহ সমুদ্র উপকূল অঞ্চল এবং ৪০টি ভ্রমণোপযোগী ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের তৈরি, ব্যবহার ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে – সমুদ্র উপকূল অঞ্চল এবং ৪০টি ভ্রমণোপযোগী ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের তৈরি, ব্যবহার ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে – কলকাতা (জুয়োলজিক্যাল গার্ডেন, সুভাষ সরোবর, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, ন্যাশানাল লাইব্রেরি, মিলোনিয়াম পার্ক, সায়েন্স সিটি, এনার্জি এডুকেশন পার্ক, নিক্কো পার্ক, নলবন, বনবিতান, সিটিজেন পার্ক, দেশপ্রিয় পার্ক, পদ্মপুকুর,অ্যালেন পার্ক, ম্যাক্ফারলেন পার্ক, ভিক্টোরিয়া পার্ক, লিয়োনার্ড স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ার, হেদুয়া, দেশবন্ধু পার্ক, শ্রদ্ধানন্দ পার্ক, টালা পার্ক, স্বভূমি, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, বিড়লা প্লানেটোরিয়াম, ইডেন গার্ডেন, নেহেরু চিলড্রেন্স মিউজিয়াম, বিড়লা ইন্ডাসট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিকাল মিউজিয়াম, উত্তর ২৪ পরগণা (ব্যারাকপুর গান্ধিঘাট), হুগলি (নিউ দিঘা পর্যটন কেন্দ্র, সোয়াখাল এনার্জি পার্ক, স্ট্র্যান্ড রোড, ছুটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, কে.এম.ডি.এ. পার্ক, ব্যান্ডেল চার্চ, বেলুড় মঠ), মুর্শিদাবাদ (হাজার দুয়ারী প্যালেস), হাওড়া (ইন্ডিয়ান বোটানিকাল গার্ডেন, সাঁতরাগাছি ঝিল)। এছাড়া শিলিগুড়ি মহকুমা ও জলপাইগুড়ি পৌরসভা এলাকায় সবরকম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
.নবীকৃত প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়মাবলি, ১৯৯৯ অনুযায়ী নবীকৃত প্লাস্টিক দ্বারা উৎপাদিত ক্যারিব্যাগে কোনো খাদ্যদ্রব্য বহন করা নিষিদ্ধ।
• তৈরি খাবার রঙিন প্লাস্টিকের ব্যাগে বহন ও সংরক্ষণ করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্লাস্টিক রোধকারী নির্দেশ অমান্য করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
.প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ।
.নির্দেশ অমান্যকারী প্রস্ততকারক, মজুতদার ও বিক্রেতাদের কারখানা, গুদামঘর ও দোকান প্রয়োজনে বন্ধ হতে পারে অথবা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
.প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ প্রভৃতির তৈরি ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।
পূজার প্রতিমা বিসর্জনের পরে জলদূষণ নিয়ন্ত্রণ
প্রতিমা বিসর্জনের পর নদীগর্ভ থেকে সব বর্জ্য তুলে নেওয়া দরকার এবং নদীর জলদূষণ রোধ করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এই নির্দেশ পূজার ক্লাব, সমিতি বা সংগঠকদের দিতে হবে। এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে করার জন্য পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পূজা সংগঠকদের কাছ থেকে উপযুক্ত মাসুল আদায় করতে পারেন। যদি কোনও ব্যক্তি বিসর্জিত প্রতিমা/কাঠামো/বর্জ্য নদীগর্ভ থেকে তুলে পুনর্ব্যবহার করতে চায়, তাহলে পুলিশ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্যে তা করা যেতে পারে।
প্রতিমা বিসর্জনের পরে জলদূষণ রোধ করার কিছু বিশেষ নিয়মাবলি
১. সার প্রস্তুতির সুবিধার জন্য ফুল/ পাতা একটি আলাদা পাত্রে ফেলতে হবে।
২. বিসর্জনের জন্য আলাদা স্থান চিহ্নিত করতে হবে।
৩. পুলিশের বা জেলা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী বিসর্জনের অনুমতি দিতে হবে। বিসর্জনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত বর্জ্য নদীগর্ভ থেকে তুলে যথাস্থানে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. এই সকল বর্জ্যপদার্থ সঠিকভাবে স্থানান্তরিত করার জন্য স্থানীয় পুলিশ থানার সাহায্য নিতে হবে।
৫. কোনও অবস্থাতেই এইসব বর্জ্য পোড়ানো বা যত্রতত্র ফেলে দেওয়া যাবে না।
চিকিৎসাজাত বর্জ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা
হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন চিকিৎসাজাত বর্জ্য যখন অবহেলা সহকারে ফেলা হয়, তখন তা নিঃশেষ হয়ে যায় না; বরং তা আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করার পথ খুঁজে নেয়। চিকিৎসাজাত বর্জ্য ফেলার সঠিক স্থান রয়েছে।
হলুদ পাত্র– মানুষের শরীরের বাদ দেওয়া কলা, কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ; ব্যবহৃত গজ, তুলো। বাতিল ওষুধপত্র এবং ল্যাবরেটরি বর্জ্য (প্লাস্টিক ছাড়া)।
নীল পাত্র– ব্যবহৃত রক্ত ও মূত্রের ব্যাগ, আই.ভি. সেট, যন্ত্রাংশসহ সিরিঞ্জ, ফেলে দেওয়ার যোগ্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য ইত্যাদি।
ছিদ্ররোহিত পাত্র– ছুঁচ, স্ক্যালপেল, ভাঙা কাঁচ ইত্যাদি সহ সমস্ত ধারালো জিনিস।
* সংশ্লিষ্ট আইন মানা, অর্থ সাশ্রয়, পরিশোধনযোগ্য বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, পেশাজনিত রোগের হ্রাস এবং সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে বর্জ্যের চরিত্র অনুযায়ী সঠিক স্থানে বর্জ্য ফেলা এবং সঠিক পরিশোধন প্রয়োজন।
* চিকিৎসাজাত বর্জ্য ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কিছু বিশেষ কর্তব্য আছে।
* চিকিৎসাজনিত জৈব বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার) নিয়মাবলি, ১৯৯৮ অনুযায়ী এই প্রকার বর্জ্য উৎপাদনকারী চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির পর্ষদের কাছ থেকে যথাযথ অনুমোদন এবং ভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক।
উপরিউক্ত আইনগুলি মূলত দূষণ পর্ষদ কার্যকরী করে থাকেন। ভারতবর্ষের বুকে অন্যান্য সংস্থা যথাক্রমে জেলাশাসক, পুলিস দপ্তর, পৌর বিষয়ক দপ্তর, মৎস দপ্তর, শ্রম দপ্তর, বন দপ্তর ও পরিবহন দপ্তর বিভিন্ন আইন কার্যকরী করে থাকেন। এই সমস্ত আইনের মধ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতির কথা ঘোষিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে পরিবেশ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ভারতীয় সংবিধানে গণতন্ত্রের জয়গান করা হলেও পরিবেশ আইনের ক্ষেত্রে মানুষের মতামত নেওয়ার যে সুযোগ ছিল তা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হচ্ছে বিশেষ করে আজকের দিনে যখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হচ্ছে তখন জনমতের ভূমিকা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বা কোন শিল্পতালুক গড়ে তুলতে গেলে পরিবেশ সুরক্ষা আইনে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা ও তাদের মতামত নেওয়ার আইনি স্বীকৃতি ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে জনমত নেবার আইনি প্রক্রিয়া সংকুচিত করা হচ্ছে এবং যে সব ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত জনমত গ্রহণ করার আইনি প্রক্রিয়া বলবৎ আছে সেখানেও মানুষের মত গ্রহণ করাটা একটি অনুষ্ঠানিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মানুষের কথা যে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে শোনার প্রয়োজন আছে এ কথাটাই প্রায় প্রশাসনের মানুষেরা বুঝতে চান না কিংবা না বোঝার ভান করেন। ফলত জনমত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হবার বিষয়টি প্রায় এক অনিশ্চিত বাতাবরণের মধ্যে হারিয়ে যায়।
পরিবেশ কেবল কয়েকটি আইনের সমষ্টি নয়। পরিবেশ ভাবনা একটি বিশেষ দর্শন। এই দর্শনকে সামনে রেখেই পরিবেশ আইনের সৃষ্টি। ভারতের সামগ্রিক পরিবেশ আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ভারতের পরিবেশ আইন যথেষ্ট কঠিন ও কঠোর এবং কেবল মানুষ নয়, অন্যান্য প্রজাতিকেও সুষ্ঠুভাবে রক্ষা করার জন্য আইনে অনেক কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা পরিবেশ আইনের কার্যকারিতা ও যাঁরা পরিবেশ আইন কার্যকরী করেন বা যাঁরা পরিবেশ আইন কার্যকরী করার জন্য আদেশ প্রদান করেন, সে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই হোক বা প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বই হোক, তাঁদের কাছে পরিবেশ কেবল কয়েকটি আইনের সমষ্টি মাত্র । কিন্তু পরিবেশ ভাবনা একটি আন্তঃপ্রজন্ম ভাবনা। আমরা যারা আজকের এই পরিবেশকে উপভোগ করছি, প্রত্যেকেই বিগত প্রজন্মের কাছ থেকে এই পরিবেশকে ধার নিয়েছি বেঁচে থাকার জন্য এবং এই শর্তসাপেক্ষে যে আগামী প্রজন্মকে এই পরিবেশটি ঠিক যেমন ভাবে পেয়েছি সেই ভাবে দিয়ে যেতে হবে। দেশের স্বাভাবিক আইনও স্বীকার করে যে যদি কোন জমি ধার নেওয়া হয় তবে সেই জমি তাকে বা তার উত্তরাধিকারকে সেই ভাবেই ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দর্শনটি পরিবেশ ভাবনার ক্ষেত্রে একটি অতি জরুরি উপাদান। এই আন্তঃপ্রজন্ম দায়িত্ববোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার সমীকরণকে যদি আত্মস্থ করা না যায় তবে পরিবেশ আইন কার্যকরী করা সম্ভব নয়। কিন্তু সব থেকে নির্মম সত্য যে এই সত্যটি প্রায় অব্যক্ত থেকে গেছে। ফলত পরিবেশ আইনের কার্যকারিতাও শূন্য অংকে পৌছে গেছে যার দায়ভার অস্বীকার করার ক্ষমতা আমাদের কারোরই নেই। আগামী প্রজন্ম এই প্রশ্নটি আমাদের কাছে রাখবে কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় কজন বেঁচে থাকবে জানা নেই। তবে পরিবেশ আইন স্থানীয় ভাবেই হোক বা বিশ্বজুড়েই হোক তার শূন্যমার্গের অকার্যকারিতা ক্রমাগত সমস্ত প্রজাতিকেই প্রায় টেনে নিয়ে যাবে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
আইনের সঠিক প্রয়োগ নির্ভর করে সুষ্ঠু প্রশাসন, সক্রিয় বিচার ব্যবস্থা ও সামাজিক চেতনার ওপর। আইন সৃষ্টি হলেও আইনের প্রয়োগ সম্বন্ধে গণচেতনা অত্যন্ত প্রয়োজন। সতীদাহ প্রথা রোধে আইন সৃষ্টি হয়েছে বহু বৎসর আগে, তবু আজও রূপ কানোয়ার জ্বলন্ত চিতায় যেতে বাধ্য হয়। প্রশাসন নীরব থাকে। সতীদাহের সমর্থনে মানুষ উল্লাস করে, নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। সুতরাং পরিবেশ রক্ষার্থে আইন সৃষ্টি হলেও তার প্রয়োগ সঠিক ভাবে সম্ভব নয় যদি না সাধারণ মানুষ পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতন হয়। অবশ্য সুষ্ঠু চেতনা সৃষ্টি করার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনের বাধ্যবাধকতা একান্ত প্রয়োজন। ইদানিংকালে ভারতের বিচার ব্যবস্থা থেকে অত্যন্ত কয়েকটি মূল্যবান সিদ্ধান্ত উচ্চারিত হয়েছে। ভারতের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্থান সুপ্রিম কোর্ট, একটি মামলার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বলেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকার দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা। সামাজিক চেতনার ফলশ্রুতি অনুযায়ী সাধারণ মানুষ সুস্থ দূষণমুক্ত পরিবেশ পাবার জন্য মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে বিচার ব্যবস্থার কাছে আবেদন করেছেন। আশি বৎসরের একজন বৃদ্ধা মহিলা একটি কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের বিচারপতি শ্রী সুহাস সেনের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। বিচারপতি উক্ত কারখানা বন্ধ করে দেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টের ভিত্তিতে। উক্ত বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করে দূষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে।
লিখেছেন – বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়,
Disclaimer:
- The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
- The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s).
- All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
- No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

