You are currently viewing উন্নয়ন – প্রতিশ্রুতি – বাস্তবতা

উন্নয়ন – প্রতিশ্রুতি – বাস্তবতা

Share this post

১৯৫৯ এর ৬ ডিসেম্বর ধানবাদের পাঞ্চেতে ডি.ভি.সি.-র চতুর্থ নদীবাঁধ প্রকল্পের উদ্বোধন হয় । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর ইচ্ছানুসারে উদ্বোধন করেন এক আদিবাসী পঞ্চদশী বুধনী মেঝান । অভূতপূর্ব এই দৃশ্যে চমৎকৃত হয়েছিল সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব । এক নতুন দিশার সম্ভাবনায় উদ্বেল হয়েছিল মানুষ । তারপর ৬২ বছর অতিক্রান্ত । সময় চলেছে নিজস্ব গতিতে । বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে বুধনী মেঝান । মোহভঙ্গ হয়েছে মানুষের । সেদিনকার নতুন দিশার সেই সম্ভাবনা অচিরেই মরীচিকায় পর্যবসিত হয়েছে । উন্নয়নের যূপকাষ্ঠে হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন । তাঁরা খুইয়েছেন তাঁদের বাসস্থান, হারিয়েছেন রুটিরুজির সংস্থান । তথাকথিত উন্নয়ন ও দেশপ্রেমের ঢক্কানিনাদে চাপা পড়ে গেছে এই অসহায় মানুষগুলির আর্তনাদ, তাঁদের বুকফাটা কান্না ।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের ভূগর্ভে সঞ্চিত আছে অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ । উন্নয়নের তাগিদে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে খননকার্য তাই এখানে কোন নতুন বিষয় নয় । খননের জন্য চিহ্নিত এলাকাকে জনশূন্য করার প্রয়োজন পড়ে । এই সব এলাকা জুড়ে যে সকল আদিবাসী মানুষের বাস, মূল আঘাতটা এসে পড়ে তাঁদেরই উপর । আদিবাসী সম্প্রদায়কে তাঁদের জন্মস্থান থেকে অপসারিত করার উদ্দেশ্যে ঘোষিত হয় “প্যাকেজ” । এই প্যাকেজ যাঁদের জন্য তাঁরা এই শব্দের সঠিক অর্থ কি অনুধাবন করার আগেই হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করেন যে জমির মালিক থেকে তাঁরা কেমন করে যেন ওই প্রকল্পের অধীন কোন এক সংস্থার মজুর হয়ে গেছেন । ঠিক এহেন এক আশঙ্কাতেই এখন ভুগছেন মহম্মদবাজারের দেউচা-পাচামি এলাকার অধিবাসীরা । কখনো নদীবাঁধ প্রকল্প, কখনো কয়লা অথবা লোহার খনি আবার কখনো বা পাথর খাদান কিংবা ইঁটভাটার কারণে বিস্তীর্ণ সব এলাকা থেকে সেখানকার আদি বাসিন্দাদের সরিয়ে সেই স্থানকে খালি করা হয় । অভিজ্ঞতা বলে, অপসারিত সেই স্থানীয় আদিবাসীদের সর্বস্বান্ত করে দেয় এই প্রকল্পগুলি । প্রশ্ন উঠতে পারে, ওঠেও যে তাহলে কি উন্নয়নের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে । উন্নয়ন বনাম মানুষের বেঁচে থাকার এই লড়াই নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে । এই ধরনের প্রকল্পগুলির ফলে বহু অঞ্চলেই বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার উদ্ভব হয়েছে । যেমন কিনা এই মহম্মদবাজার,পাচামি, তালবাঁধ সহ বীরভূমের বিভিন্ন পাথরখাদানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে প্রাণঘাতী শ্বাসরোগ সিলিকোসিসের ফলে তাঁদের গড় আয়ু নেমে এসেছে ৩৫ বছরেরও কম । ভূগর্ভস্থ জ্বালানীর পরিবর্তে ক্রমশঃ বেশি বেশি করে সোলার এনার্জি ব্যবহার করার পরামর্শ বহুপূর্বেই দিয়েছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি । দরিদ্র অসহায় মানুষকে ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করে তাঁকে অনাহারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়াই হোক, অথবা সিলিকোসিস বা ওই জাতীয় রোগে মৃত্যুই হোক সবকিছুই চলছে নিজস্ব গতিতে । কিছু মানুষের সর্বগ্রাসী লোভের কাছে হার মেনেছে শুভবুদ্ধিজাত সবরকমের যুক্তি-বিচার ।

মহম্মদবাজারের দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা এবং নিশ্চিন্তপুর মৌজার খান পাঁচেক গ্রাম নিয়ে দেউচা-পাচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি নিয়ে আজ তাই সেখানকার আদিবাসী সমাজ এমন আশঙ্কিত, তাঁরা সম্মিলিতভাবে এই কয়লাখনি স্থাপনের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন এবং এই উদ্দেশ্যে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন । আমরা যাদের উপর এই প্রকল্পের কোন প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে না, তারাই বা কিভাবে বা কি ভেবে এমন নিশ্চিন্তে আছি বোঝা মুশকিল । পরিবেশগত সমস্যার দায়ভোগ কিন্তু করতে হবে আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও ।

আর প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত সেই মানুষগুলি সম্পর্কে ধ্রুবসত্যকথাটি বলে গেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, “চিরকালই মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তাদেরই সংখ্যা বেশি, তারাই বাহন, তাদের মানুষ হবার সময় নেই …. তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে, উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে ।”

সময় এসে গেছে সভ্যতার এই পিলসুজদের হাতে হাত রাখবার। পরিবেশ আকাদেমির পক্ষ থেকে আমরা সর্বতোভাবে এই অসহায় মানুষগুলির আন্দোলনের পাশে আছি । একইসঙ্গে আমরা মনে করি, সংবেদনশীল সকল মানুষ এবং সমমনোভাবাপন্ন সব সংগঠনও একইভাবে আন্দোলনকারী এই আদিবাসী মানুষগুলির সমস্যাটি অনুধাবন করবেন এবং তাঁদের পাশে থাকবেন ।

বিনীত,
বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়,
উপদেষ্টা, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, চন্দননগর।
ফোন – ৮৪২০৭৬২৫১৭,
ইমেল-biswajit.envlaw@gmail.com

শংকর কুশারী
সম্পাদক, পরিবেশ আকাদেমি, বড়বাজার, চন্দননগর – ৭১২১৩৬
ফোন : 9433810055
ইমেল : eskusari@gmail.com

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply