শব্দ-শহিদদের মৃত্যু হয়ে গেল ব্যর্থ

পশ্চিমবঙ্গের বুকে শব্দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা বহু মানুষকে হারিয়েছি। এরা প্রত্যেকেই বেশ অল্প বয়সী। এদের জীবনে স্বপ্ন ছিল, বেঁচে থাকার আশা ছিল। মহামান্য আদালত ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দ্বারা প্রজ্ঞাপিত শব্দদূষণ সম্পর্কিত যে নিয়ম রয়েছে, তা মানুষ মানছে না দেখে তারা এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতিদের হাতে মৃত্যুবরণ করে। ফলে কেউ হারাল তার স্বামী, কেউ হারাল তার বাবা অথবা মা, কেউবা হারাল সন্তান। শব্দের তাণ্ডবে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে কালীপুজোর সময়, ছট পূজার সময়, বড়দিনের সময় যে মৃত্যুযন্ত্রণা, তা দূর করতে মাননীয় কলকাতা উচ্চ আদালত বলেছিলেন যে, আপনার আনন্দ যেন অপরের দুঃখের কারণ না হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই নীতিকে আঁকড়ে ১৯৯৬ সাল থেকে নানান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও কিছু প্রতিবাদী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আইনি লড়াই করে মানুষকে শব্দযন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। স্মরণীয় বিচারপতি ভগবতী প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কোন মানুষকে বন্দি শ্রোতায় পরিণত করা যাবে না। এই শব্দযুদ্ধে অন্যতম সৈনিক হিসেবে তদানীন্তন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য আইনাধিকারিক ক্রমাগত আইনি লড়াই করেছেন। এই শব্দবাজিকে চালু রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের তাবড় নামিদামি আইনজীবীরা দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু শব্দবাজি ফিরিয়ে আনতে পারেননি। প্রতিবারই আইনি যুদ্ধে আদালতে পরাজিত হয়েছেন। এসব সত্ত্বেও দেখা গেল, বর্তমান দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিস্ময়করভাবে আইন জারি করে জানাল শব্দবাজি আবার ফিরে এল। এই শব্দবাজি ফিরে আসার মানে দীপক দাস থেকে শুরু করে যে সব মানুষ প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হল, মৃত্যুবরণ করল, এমনকী একজন প্রতিবন্ধী মানুষও আক্রমণের হাত থেকে ছাড় পায়নি, তাদের সমস্ত মৃত্যুকে অবজ্ঞা করা হল এবং এই প্রাণত্যাগী শব্দ-শহিদদের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান দেখানো হল না। ফলে নতুন করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে আবার মৃত্যু যন্ত্রণা ফিরল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে গণশত্রুতে পরিণত হল। মন্দিরের দূষিত জলকে চরণামৃত হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে গণশত্রু চলচ্চিত্র করেছিলেন বিশ্ববন্দিত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। এক সময় ঠিক এই ধরনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে তারকেশ্বরের দুধপুকুর বন্ধ করা হয়েছিল। আজ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সমস্ত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে শব্দবাজি ফিরিয়ে নিয়ে এল। এটি অতি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, সকল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যেসব সাধারন মানুষ পরিবেশ নিয়ে সামান্যতম ভাবনা চিন্তা করেন, তাঁদের সকলেরই এ বিষয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। শব্দযন্ত্রণায় পশুপাখিও কাতর হয়ে পড়ে। তাই জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা মানুষদেরও এই বিষয়ে প্রতিবাদ করা দরকার। এটা মেনে নেওয়া যায় না। যেমন কামদুনির হত্যাকারীদের শাস্তি কমে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ঠিক একইভাবে এই শব্দবাজি ফেরানোর উদ্যোগ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আসুন, এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যাপকভাবে গণস্বাক্ষর সম্বলিত তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

List of such Sound martyrs in the State of West Bengal since 1997 and onwards
are narrated below:

(a) Dipak Das, Srirampore ,murdered in the year 1997;

(b) Ranjit Kumar Naskar, Canning, murdered in the year 2003;

(¢) Subodh Kumar Mahato, Jaotaldihi, murdered in the year 2010;
(d) Bakul Adhikary, Bijpur, murdered in the year 2010;

(e) Pradip Roy, Gaighata, murdered in the year 2010

(f) Manmohan Kutty, Haldia, murdered in the year 2011;

(g) Pijush Kanti Sarkar,Moheshtala, murdered in the year 2012;
(h) Pintu Biswas, Ashoknagar, murdered in the year 2013;

(i) Durlav Chandra Mahato, Jhargram, murdered in the year 2015
(j) Putin Mondal, Farakka, murdered in the year 2016;

(k) Purnima Maitra, Bijoygarh, murdered in the year 2016;

(I) Haradhan Mal, Khargram, Murshidabad, murdered in the year 2019;
(m) Subhas Biswas, Hanskhali, murdered in the year 2021;

(n) Afzal Momin, P.S.- Mothabari, Malda, murdered in the year 2023