You are currently viewing বিশ্বজুড়ে জলসঙ্কট বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে জলসঙ্কট বাড়ছে

Share this post

বিশ্বজুড়ে এক অভূতপূর্ব জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ সহ বিশ্বের ২৫টি দেশ বর্তমানে এক চরম জলসঙ্কটের মুখোমুখি। এসব দেশে বাৎসরিক জলপ্রাপ্তির পরিমাণ ও খরচ সমান। আবিশ্ব প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ (মোট জনসংখ্যার ৫০%) বছরে অন্তত একমাস জলকষ্টে ভোগে। ২০৫০ সালে এটি ৬০% হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। বিশ্বে প্রতি বছর চরম জলসঙ্কটে ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। ওপরের তথ্যগুলি জানাচ্ছে ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট-এর ‘অ্যাকুইডাক্ট ওয়াটার রিস্ক অ্যাটলাস’।

জলসঙ্কট কী ও কেনঃ

জলসঙ্কট সাধারণত দুই প্রকার- প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক। প্রাকৃতিক জলসঙ্কটে চাহিদা মেটানোর পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না। ভৌমজলস্তর নেমে যায়। অর্থনৈতিক জলসঙ্কট ঘটে যখন অতি দুর্বল আর্থসামাজিক পরিকাঠামোয় উপযুক্ত বিনিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে (আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অংশে) গরিব মানুষ প্রাকৃতিক মিঠাজল ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সেচসেবিত কৃষিজমির বৃদ্ধি, পশুপালন, গেরস্তালির কাজ, শক্তি উৎপাদন ও কলকারখানায় জলের ব্যবহারের জন্য বিশ্বজুড়ে জলের চাহিদা ১৯৬০ সালের থেকে বর্তমানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে জলপ্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। সুষ্ঠু জল-ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো গড়ে তোলায় লগ্নির ঘাটতি, টেকসই জল-নীতির অভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলপ্রাপ্তির পরিমাণ ক্রমশ কমছে।

কীভাবে মাপা হয় জলসঙ্কটঃ

জাতিপুঞ্জের মতে যখন মাথাপিছু লভ্য মিঠাজলের পরিমাণ বছরে ১৭০০ ঘনমিটারের কম হয়, সেই অবস্থাকে জলের ‘ঘাটতি’ বলে ধরা হয়। এই পরিমাণটি যখন মাথাপিছু ১০০০ ঘনমিটারের কম হয় তখন তাকে বলে ‘উচ্চ জলসঙ্কট’। অন্যভাবে, উচ্চ জলসঙ্কটে ভোগার মানে দেশটি তার লভ্য মিঠাজলের ৪০% ব্যবহার করেছে। মাথাপিছু লভ্য মিঠাজলের পরিমাণ বছরে যখন ৫০০ ঘনমিটারের নিচে নামে, তাকে ‘চরম জলসঙ্কট’ বলে। চরম জলসঙ্কটে ভোগা দেশগুলি তার লভ্য মিঠাজলের অন্তত ৮০% খরচ করেছে।

কোন্‌ দেশগুলি চরম জলসঙ্কটেঃ

ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট-এর গবেষক সামান্থা কুজমা প্রমুখ জানাচ্ছেন, পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা সবচেয়ে জলসঙ্কটাপন্ন। এখানকার ৮৩% বাসিন্দা চরম জলকষ্টে রয়েছে। দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলির ৭৪% মানুষ এই চরম জলসঙ্কটের মুখোমুখি। পৃথিবীতে বাহারিন, সাইপ্রাস, কুয়েত, লেবানন, ওমান এবং কাতার এই ছয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি জলসঙ্কটে রয়েছে। এখানে কোন স্বল্পমেয়াদি খরা দেখা দিলে অঞ্চলগুলি জলশূন্য হয়ে যাবে। এমনকী সরকারকে কলের জলের ব্যবস্থাকে বন্ধ করতেও হতে পারে। গবেষকদের আশঙ্কা ইংল্যান্ড, ভারত, ইরান, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এমন জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জলের চাহিদা বাড়বে প্রায় ২০-২৫%। কিন্তু জলবিভাজিকাগুলিতে জলের জোগান আরও অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে ১৯%। ফলে অতিরিক্ত আরও ১০০ কোটি মানুষ চরম জলসঙ্কটে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সমস্ত মানুষ চরম জলসঙ্কটের মুখোমুখি হবে। এটি যে কেবল ঘর-গেরস্তালি, কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রেই সমস্যার তা নয়, এতে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়বে। ইরান-এ কয়েক দশক ধরে নিচু মানের জল-ব্যবস্থাপনা এবং কৃষিতে বেহিসেবি জল খরচে সৃষ্ট জলসঙ্কট সেখানে মানুষকে ক্ষোভে পথে নামতে বাধ্য করেছে।

২০৫০ সালে আফ্রিকার উপ-সাহারা অঞ্চলে জলের চাহিদা ১৬৩% বাড়বে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এখনও আফ্রিকার উপ-সাহারিয় সকল দেশ তীব্র জলসঙ্কটে পড়েনি, কিন্তু এখানে উন্নয়নমূলক কাজ, কৃষি এবং গেরস্তালিতে ক্রমাগত জলের চাহিদা ও খরচ বাড়ছে। দ্বিতীয় চাহিদাসম্পন্ন অঞ্চলটি লাতিন আমেরিকা। এখানে জলের চাহিদা বাড়বে প্রায় ৪৩%।

প্রসঙ্গ ভারতঃ

ভারতবর্ষে কৃষি, শিল্পকারখানা এবং গেরস্তালির মোট জলের চাহিদার ৬৫% মেটে নদীগুলি থেকে। ‘নীতি আয়োগ’-এর ‘কম্পোজিট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইনডেক্স’ প্রতিবেদন (অগাস্ট, ২০১৯) থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের ৭০% জলই দূষিত; নদী শুকনো, মৃতপ্রায়। বর্তমানে ভারতের প্রতি তিনটি শহরের মধ্যে দুটিতে প্রাত্যহিক জলের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিটি বড় শহরের বাসিন্দাকে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি দামে জল কিনতে হচ্ছে। ঘর-গেরস্তালি এবং পানীয় ছাড়াও প্রয়োজনীয় জলের ৮০% লাগে খাদ্য উৎপাদনে।

স্বাধীনতার সময়ে বছরে মাথাপিছু জলপ্রাপ্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫২০০ ঘনমিটার। বর্তমানে এটি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০০ ঘনমিটারে। নীতি আয়োগ-এর প্রতিবেদনটি অনুযায়ী ৮২ কোটি ভারতবাসী মাথাপিছু বছরে জল পায় ১০০০ ঘনমিটার বা তার কম (Falkenmark সূচক অনুযায়ী এটি সরকার-স্বীকৃত ভারতে জলসঙ্কট ইঙ্গিতকারী সীমা)। এই মানুষদের ৬০%-এরই বাস গঙ্গানদীর অববাহিকায়। বাকিদের বাস অন্য এগারোটি নদী অববাহিকায়। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ সহ দেশের ২১টি বড় শহরে ভূগর্ভস্থ জল শেষের মুখে। ফলে তীব্র জলসঙ্কটে ভুগবে প্রায় দশ কোটি ভারতীয়। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলসঙ্কটের মুখে পড়বে প্রায় ৪০% ভারতবাসী। বর্তমানে ৬০ কোটির বেশি ভারতীয় ভালরকম জলসঙ্কটের মুখোমুখি। উল্লেখ্য, পানীয় জলসঙ্কট, খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে ভারতে প্রতি বছর ২ লক্ষ মানুষ মারা যায়।

ভারতের জলসঙ্কট দেশের শক্তিসঙ্কট ডেকে আনবে। দেশের সিংহভাগ বিদ্যুতের জোগানদার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নব্বই শতাংশ ঠান্ডা হবার জন্য মিঠাজল-নির্ভর। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির চল্লিশ শতাংশ ‘উচ্চ’ জলসঙ্কটে রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়ে শিল্প ও কৃষির উৎপাদন কমবে। দেখা গেছে, ২০১৭-২০২১ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলি ঠান্ডা হবার প্রয়োজনীয় মিঠাজল পেলে ১৫ লক্ষ গেরস্তবাড়িতে পাঁচ বছরের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেত। অংকের হিসেবে এই তাপশক্তির পরিমাণ ৮.২ টেরাওয়াট-ঘণ্টা।

খাদ্য উৎপাদন ও অর্থনীতিতে প্রভাবঃ

জলের ঘাটতি ফলে খাদ্যসুরক্ষাও বেশ সঙ্কটে। এরই মধ্যে পৃথিবীতে আখ, গম, ধান ও ভুট্টা উৎপাদনকারী সেচসেবিত কৃষির ৬০% চরম জলসঙ্কটের মুখোমুখি। জনতত্ত্ববিদরা বলছেন, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা আরও ১০০ কোটি বাড়বে। ২০১০ সালের তুলনায় বর্ধিত এই জনসংখ্যার মুখে আরও ৫৬ শতাংশ বেশি খাদ্য-ক্যালোরি তুলে দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান জলের ঘাটতিজনিত খাদ্যসুরক্ষার সঙ্কট বিশ্বজুড়ে আর্থিক বিকাশেও ছাপ ফেলবে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট-এর তথ্য অনুযায়ী ‘উচ্চ’ জলসঙ্কটের দরুন ২০৫০ সালে বিশ্বজুড়ে স্থূল আভ্যন্তরীণ উৎপাদ (জিডিপি) কমবে প্রায় ৩১% (৭০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জলসঙ্কটের দরুন খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ায় বিশ্বজুড়ে জিডিপি কমেছিল ২৪% (১৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)। গবেষকরা বলছেন, ২০৫০ সালে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ জিডিপি কমবে, তার অর্ধেকটাই কমবে ভারত, মেক্সিকো, মিশর এবং তুর্কি এই চারটি দেশে। ভারত, চিন এবং মধ্য-এশিয়া যদি সুষ্ঠু জল-ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে এসব অঞ্চলে ২০৫০ সালে ৭-১২% জিডিপি কমে আসবে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন। আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ জুড়ে সুষ্ঠু জল-ব্যবস্থাপনা নীতির অভাবে জিডিপি কমার সম্ভাবনা ৬%।

তাহলে সমাধান?

অর্থনীতিবিদরা জলকে ‘সামাজিক মূলধন’ বলেছেন। ১৯৭৬ ও ১৯৮১ সালে জাতিপুঞ্জ পৃথিবীর মানুষকে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তায় মিঠাজল নিয়ে সতর্ক করেছিল। ২০০৩ সালে পরিবেশ বার্তায় জাতিপুঞ্জ পরিষ্কার জানিয়েছিল, ‘জলের অভাব – ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ’। জাতিপুঞ্জের ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০’-এর ৬ নম্বর লক্ষ্য ‘বিশুদ্ধ জল এবং স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় পরিচ্ছন্নতা’।

আবিশ্ব এই জলসঙ্কট কাটাতে ভূগর্ভ থেকে পাম্প করে জলের বেলাগাম উত্তোলন বা নদী থেকে খাল কেটে সরাসরি কৃষিখেতে জল দেওয়ায় রাশ টানতে হবে। শিশিরের জল ধরে রেখে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করতে হবে। চাষিদের আরও বেশি কম জলে ফলনশীল শস্য উৎপাদনে ঝুঁকতে হবে। কৃষিখেত জলে বানভাসি না করে ফোঁটা ফোঁটা করে সেচ বা স্প্রিংকলার সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলিতে নিজস্ব কুলিং স্টোরেজ চালু করে জল পুনর্ব্যবহার করতে হবে। জলের বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়া অংশটুকু নদী বা অন্য মিঠাজলের উৎস থেকে নিতে হবে। নানান সরকারি প্রকল্পে ২৪ ঘণ্টা জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতিতেও মিঠাজলের অপচয় ঘটে। ভারতে বিধায়ক/সাংসদের এলাকা-উন্নয়ন-তহবিলের টাকায় গড়া রাস্তার ধারে জলসত্রের কল খোলা থাকে, বা কলের মাথা ভাঙা থাকায় ক্রমাগত জল পড়ে।

ভারতে পাহাড়ি অঞ্চলে জলসংঙ্কট রয়েছে। এখানে সব ঝোরা শুকিয়ে যাওয়ায় নদীগুলিতে জলের জোগান কমে গেছে। গাছ কেটে ফেলায় বৃষ্টিপাত কমে গেছে। লবণাম্বু গাছ ও বনভূমিকে রক্ষা করতে হবে। জলাভূমি বাঁচাতে হবে। এতে যে কেবল জলের গুণমান বাড়বে তাই নয়, এগুলি খরা ও বন্যাকেও প্রতিহত করার ক্ষমতা গড়ে তুলবে। ফলে বেশ কিছু টাকাও বাঁচবে। ভারতে কোথায় কত বৃষ্টিপাত হয় তা জানা। কিন্তু দেশের বা রাজ্যের শুকিয়ে যাওয়া পুকুর-খালবিল বা শুকোনো নদীতে বৃষ্টির জল ধরে রাখলে তার পরিমাণ কী হতে পারে, সেরকম কোনও প্রতিবেদন চোখে পড়ে না। সেচ দপ্তর আছে। অথচ নদনদীর গভীরতা বজায় রাখার উদ্যোগ নেই।

তিসরি দুনিয়ার যে সমস্ত গরিব দেশ উন্নত জল-ব্যবস্থাপনার পরিকাঠামো আর্থিক কারণে গড়ে তুলতে অসমর্থ হবে, সেখানে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাঙ্ক ইত্যাদি সংস্থাকে আর্থিক সাহায্যদানে এগিয়ে আসতে হবে। আবিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অতি জরুরি। মানুষের রোজকার জল-অপব্যয়ী অভ্যাসও পাল্টানো দরকার। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউট-এর গবেষকরা দেখিয়েছেন, পৃথিবীর জলসঙ্কট সমাধানের আর্থিক খরচ বিশ্ব জিডিপি-র মাত্র ১%। অর্থাৎ মাথাপিছু ২০১৫-২০৩০ সাল পর্যন্ত দিনপ্রতি ভারতীয় মুদ্রায় কমবেশি ০.০২৮১ টাকা। মেঘনাথ সাহা বলেছিলেন, ভূপৃষ্ঠজল ব্যবহার করতে হবে। মিঠাজলের উৎসগুলোকে সর্বত্র বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নাহলে আবিশ্ব জল-দুর্ভিক্ষে অনেক অঞ্চলেই হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

লিখেছেন – রাহুল রায়

কৃতজ্ঞতা- বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply