You are currently viewing প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত — পরিবেশের নাভিশ্বাস

প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত — পরিবেশের নাভিশ্বাস

Share this post

বিগত ২৭ শে জুন ২০২২ সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ আমদানি, রপ্তানি, তৈরি এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা হয়েছে । সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ১২০ মাইক্রনের থেকে কম ঘনত্বযুক্ত সমস্তরকম প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে । এমনকি প্লাস্টিক দ্বারা নির্মিত থালা, বাটি, গ্লাস, পতাকা সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । প্লাস্টিক বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পৌরদপ্তর, পরিবেশ দপ্তর, পৌর প্রতিষ্ঠান, পঞ্চায়েত, জেলা প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সহ পুলিশ আধিকারিকদের উপর । সরকারের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স করে প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণের কথা ঘোষণা করা হল, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে দেখা যাবে প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থাপনার বিষয়টি যথেষ্ট পরিমাণেই শিথিল । সরকারি দপ্তর থেকে প্লাস্টিক সংক্রান্ত আইন কার্যকরী করার ব্যাপারে ১৯৯৯ সাল থেকে বহু বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে । পরিবেশ সুরক্ষা ১৯৮৬ আইনের পরিধির মধ্যে দাঁড়িয়ে ১৯৯৯ সালে প্লাস্টিক উৎপাদন ও তার ব্যাবহার সংক্রান্ত সরকারি নীতি ঘোষিত হয় । প্রথমে ২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় । তারপর ২৩ বছর অতিক্রান্ত কিন্তু আজও বাজারে সবথেকে বেশি যে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলি ২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের । ১৯৯৯ সালের প্রজ্ঞাপিত আইন কার্যকরী হলনা, তারই মধ্যে একটার পর একটা সরকারি বিজ্ঞপ্তি ঘোষিত হল প্লাস্টিকজাত দ্রব্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য । সরকারি আইন থাকবে অথচ তার কার্যকারিতার বিপন্নতা আমাদের ক্রমাগত হতাশ করে চলেছে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি । প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । প্লাস্টিক ব্যাগ বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য মানুষের জীবনে আজকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে । প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রথম যে জিনিষটির প্রয়োজন তা হল প্লাস্টিকের বিকল্প দ্রব্যের ব্যাপক আয়োজন ও তার সুপ্রচুর সহজলভ্যতা । অতীতে সাধারণ নাগরিকরা বাজার যেতেন চটের থলি নিয়ে এবং সঙ্গে রাখতেন আরেকটি ছোট থলি যাতে আমিষ জাতীয় দ্রব্য বহন করা যায় । প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বহুল ব্যবহার মানুষের বহুদিনের এই অভ্যাসের অবলুপ্তি ঘটিয়েছে । এখন বেশিরভাগ মানুষই বাজারে যান খালি হাতে এবং বাড়ি ফেরেন বেশ কয়েকটি ক্যারিব্যাগে তাঁর প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহন করে এবং বাড়ি ফিরেই জিনিষগুলি ক্যারিব্যাগ থেকে বের করে ব্যাগগুলি যত্রতত্র ফেলে দেবো । এই ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত নিম্নমুখী ।

আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল অতীতে দোকান থেকে কোন জিনিষ কেনার সময় কাগজের ঠোঙাতে করে দেওয়া হত কিন্তু বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে । সমস্ত জিনিষই আজ ছোট থেকে বড় প্লাস্টিক ব্যাগে ভর্তি করে দোকানে সাজানো থাকে এবং ক্রেতা তাঁর প্রয়োজনমাফিক পরিমাণমত প্লাস্টিক প্যাকেটে মোড়া সামগ্রী ক্রয় করেন । তারফলে ব্যাপক পরিমাণে প্লাস্টিক প্যাকেজিং সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে । যার কোন উত্তর আমাদের সামনে নেই । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য ভারত সরকার ১৯৮৭ সালে জুট প্যাকেজিং মেটেরিয়ালস আইন চালু করেন যাতে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পাটজাত ব্যাগে বহন করা হয় । কিন্তু কার্যতঃ এই আইনটি আজ আর কারও স্মরণে নেই ! যথেচ্ছভাবে আলু, চাল, চিনি, ময়দা, ডাল ইত্যাদি সবকিছুই প্লাস্টিক ব্যাগে বহন করা হচ্ছে । এই অবস্থা থেকে সঠিকভাবে নিষ্কৃতি পেতে গেলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের তরফে বাস্তবোচিত উদ্যোগ গ্রহণ করার দরকার আছে । এই ব্যাপারে পরিবেশকর্মীদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলি মাননীয় পরিবেশমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে 

(১) রাজ্যে জুটমিলগুলির পুনরুজ্জীবনের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে ।
(২) স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে প্লাস্টিকের পরিবর্ত সামগ্রী যথা কাপড়ের ব্যাগ, চটের ব্যাগ এবং কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা প্রভৃতির উৎপাদনে উৎসাহ দান এবং প্রয়োজনে স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া প্রয়োজন ।
(৩) প্লাস্টিক বিষয়ক আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে ।
(৪) সর্বসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সর্বতোভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ।

২০১৮ সালেও বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তা ছিলো “প্লাস্টিক দূষণ দূরীভূত করো” । মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এই একই বার্তা আরো একবার নতুন করে দেওয়ার অর্থ একটাই । গোটা বিশ্ব জুড়েই এই বিষয়ে করণীয় কর্তব্যটুকু যথাযথভাবে করা হয়নি বা হচ্ছে না । এই বিষয়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে সঠিক সামঞ্জস্যের অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে । পাশ্চাত্য দেশগুলি এই প্লাস্টিকজাত আবর্জনা ক্রমাগত: যথেচ্ছভাবে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করে চলেছে । এর ফলে জলের নিচে প্লাস্টিকের পাহাড় তৈরি হচ্ছে এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রাণ সংশয় হচ্ছে । অন্যদিকে প্রাচ্য দেশগুলিতেও প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত দ্রব্যাদির ব্যবহার চলেছে অবাধে ।

আন্তর্জাতিক স্তর থেকে শুরু করে জাতীয়, রাজ্য এমনকি স্থানীয় স্তরেও এই প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে যা যা করণীয় ছিলো তার কিছুই করা হয়নি । দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বিষয়ে যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম সীমাবদ্ধ থেকে গেছে মাঝে মধ্যে কয়েকটি নির্দেশনামা জারি করার মধ্যেই । গোটা বিশ্বেই ভারতবর্ষ পাট এবং কাপাস শিল্পে অগ্রণী । প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির কাজে তাই ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ইতিমধ্যেই বহু দেরি হয়ে গেছে । গোটা পৃথিবী জুড়েই উষ্ণায়ন ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে । আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ভারতবর্ষের উচিত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন, নেপাল, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ যারা পাট উৎপাদনে এগিয়ে আছে, তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্লাস্টিকের বিকল্প উৎপাদনের বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করা ।

সবশেষে আমরা আবারও বলতে চাই, আইন করলে তাকে কার্যকরী করার জন্য যথাযথ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকতেই হবে অন্যথায় সেই সমস্ত আইন কেবলমাত্র বইয়ের পাতার শোভাবর্ধনই করবে, যা কখনোই কাম্য নয় ।

**একান্নতম বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ আকাদেমির প্রতিবেদন**

বিনীত,

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়
সভাপতি, পরিবেশ আকাদেমি ॥
ফোন – 8420762517
ই-মেল – biswajit.envlaw@gmail.com

শংকর কুশারী
সম্পাদক, পরিবেশ আকাদেমি ॥
ফোন – 9433810055
ই-মেল – eskusari@gmail.com

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply