You are currently viewing সদ্যসমাপ্ত জি -20 সম্মেলন এবং পরিবেশ

সদ্যসমাপ্ত জি -20 সম্মেলন এবং পরিবেশ

Share this post

জি -20 অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর আঠেরোতম সম্মেলন হয়ে গেলো গত ৯ এবং ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ আমাদের রাজধানী দিল্লিতে । হোস্ট দেশ হিসেবে ভারত যে বার্তাটির খসড়া প্রস্তুত করেছিলো এবং বিস্তর আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কর্মকর্তারা যে ঘোষণাপত্রটি সর্বসম্মতভাবে প্রকাশ করেন তার মধ্যে যুদ্ধ, আধিপত্যবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে । একইসাথে লো কার্বন হেলথ সিস্টেম এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সময়ে আবহাওয়াকে মাথায় রাখার কথাও ঘোষিত হয়েছে । অর্থনীতির ব্যলান্সড গ্রোথ পরিকল্পনার মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রতিশ্রুতিও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এই ঘোষণাপত্রে ।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কয়েকশো কোটি টাকা নাকি খরচ করা হয়েছে এই সম্মেলনের আয়োজন করতে গিয়ে । যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে আসে দেশের নিদারুণ দারিদ্র্যের কথা, সেখানে এই বিশাল অঙ্কের ব্যায় কতোখানি যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্নও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে । এই মতের সঙ্গে দ্বিমত না হয়েও এই মুহূর্তে আমরা মূলতঃ যে বিষয়টি তুলতে চাইছি সেটা হল, এই যে একটার পর একটা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভারি ভারি আলোচনা হয়, তারপর কাজের কাজটা ঠিক কি হয় ! পরিবেশ ও আরো বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তব হল এই যে, এই সমস্যাগুলির কোনটারই সমাধান তো দুরস্ত, কেশাগ্র স্পর্শ করাও যায়নি !

আসলে পরিবেশ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ও পারিপার্শিক সমস্যাগুলির মূল কারণগুলিকে যতোক্ষণ না দূর করা যাচ্ছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত কাজের কাজটা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই । সদ্য সমাপ্ত এই জি -20 সম্মেলনে কার্বন নির্গমণ কমানোর কথা বলা হয়েছে । যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই কার্বন নির্গমণের ঘটনা সবচাইতে বেশি ঘটে । অর্থাৎ এই বিশ্বে যুদ্ধ যতোদিন থাকবে, ততোদিন কার্বন নির্গমণকে বন্ধ করা অথবা কমানো কোনভাবেই সম্ভব নয় । যতোই যুদ্ধবিরোধী কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা হোক না কেন, যুদ্ধ কিন্তু পৃথিবীর কোন না কোন অঞ্চলে লেগেই আছে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও কিন্তু থেমে থাকেননি দেশ নায়করা । কখনো ভিয়েতনাম, কখনো আরব উপমহাদেশ, কখনো ভারত পাকিস্তান, কখনো আবার রাশিয়া ইউক্রেন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুদ্ধের আগুনে ।

কার্বন নির্গমণের আরো একটি বড়ো কারণ হল ভোগ্যদ্রব্যের মাত্রাহীন ব্যবহার । পুঁজিপতি এবং বৃহৎ ব্যবসায়ীরা মুনাফা এবং আরো বেশি মুনাফা অর্জনের তাগিদে মানুষের মনে বেশি বেশি করে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন নতুন নতুন ভোগ্যদ্রব্যের জন্য লোভ । কৃত্রিমভাবে তৈরি এই চাহিদার ফলে বাজারে নতুন নতুন ভোগ্যদ্রব্যের আগমন ঘটছে । অনেক ক্ষেত্রেই এই ভোগ্যদ্রব্যগুলি ব্যবহার করলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গমণ ঘটে । ভোগবাদের এই চরম অবস্থাকে আটকানো বা খর্ব করার কোন উদ্যোগই চোখে পড়ছে না ।

উপরোক্ত এই দুটি ক্ষেত্রেই মূল অপরাধটি কিন্তু সংঘটিত করছেন অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর এবং বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলি । দ্যাখা যাবে সে যুদ্ধই হোক কিংবা ভোগবাদের উদগ্র উৎকট রূপ এসবই এই তথাকথিত উন্নত দেশগুলির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রশ্রয়ে ঘটে চলেছে । এই দেশগুলি তো বটেই অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিশ্রুতি এবং কাজের মধ্যেও থেকে যাচ্ছে বিস্তর ফারাক । এবং এই কারণেই এই ধরনের একটার পর একটা সম্মেলন পর্যবসিত হচ্ছে কেবলমাত্র বাক সর্বস্ব আলোচনাসভায় । পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে দারিদ্য দূরীকরণ কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ।

জি -20 সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কাছে এমন একটা প্রশ্ন রাখাই যায়, তাঁরা কি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কর্তৃক ঘোষিত পরিবেশ বার্তাগুলি সম্পর্কে আদৌ ওয়াকিবহাল ? যে কথা বারংবার বলা হয়ে চলেছে যে একটি পরিবেশ বান্ধব সমাজ গড়ে তোলার প্রাথমিক শর্ত হল দারিদ্য দূরীকরণ । সেই ব্যাপারে এই দেশগুলির কেউই কি কোনরকম আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বা করছেন ? যদি আমাদের দেশের কথাই ধরা যায়, বস্তি উচ্ছেদ করে, দারিদ্র্যকে লুকিয়ে রেখে সম্মেলনের জাঁকজমককে অক্ষত রাখার প্রয়াসই তো পরিষ্কার করে দ্যায় প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি । যে দিল্লি শহরে এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো, সেই শহরটিই এই মাত্র কয়েকমাস আগেই এক ভয়াবহ বায়ুদূষণে আক্রান্ত হয়েছিলো । দিল্লি, চেন্নাই, কোলকাতা, মুম্বাইয়ের মতো মহানগরী সহ দেশের প্রতিটি শহর এই ধরনের বায়ুদূষণের শিকার । দেশে সম্ভবতঃ এমন একটি শহরও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানকার নদীগুলি দূষণমুক্ত, যেখানে দূষিত জলকে পরিশুদ্ধ করে পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে কিংবা যেখানে আইন অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু আছে । উত্তরপূর্ব ভারতের হাতে গোনা কয়েকটি নদীকে বাদ দিলে দেশের বুকে যে সমস্ত বৃহৎ নদীগুলি প্রবাহিত হয়, যারা দীর্ঘকাল ধরে দেশের মানুষকে মিষ্টি জলের জোগান দিয়ে চলেছে তাদের জলকে শোধন করার কোন স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা নেই । যদি আমাদের রাজ্যের প্রসঙ্গে আসা যায় দেখতে পাবো, তাঁদের অবস্থাও তথৈবচ । জলাভূমি ধ্বংস, কলকারখানার লাগামহীন দূষণ ইত্যাদি কোনকিছুই প্রশাসনের নীরবতাকে ভঙ্গ করতে সক্ষম হচ্ছে না । আমরা যদি কেবলমাত্র বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণের ঘটনাগুলির কথাই ভাবি তাহলেই বোঝা যাবে এঁদের স্থবিরতা এবং গয়ংগচ্ছ ভাব ।

আমাদের প্রত্যেককে এই বিষয়ে সচেতন এবং সরব হবার সময় এসে গেছে । এটা পরীক্ষিত সত্য যে প্রান্তিক মানুষরাই মূলতঃ দূষণের শিকার হন । তাই এই মানুষগুলিকেই দূষণ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত করতে হবে । যে মানুষ জীবিকার কারণে নদীর উপর নির্ভরশীল তাঁদের নিয়ে আসতে হবে নদীদূষণ তথা জলদূষণ বিরোধী আন্দোলনের অঙ্গনে । কলকারখানার লাগামহীন দূষণের শিকার যাঁরা সেই শ্রমজীবী মানুষকে যুক্ত করতে হবে বায়ুদূষণ বিরোধী আন্দোলনে । কেবলমাত্র তাহলেই এই আন্দোলনগুলিকে ড্রয়িংরুম এবং অডিটোরিয়ামের চৌহদ্দি ছেড়ে রাস্তায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে । প্রত্যেকটি সমমনোভাবাপন্ন সংগঠন এবং সংবেদনশীল মানুষের উচিত এই বিষয়ে যে যেভাবে পারেন, এগিয়ে আসুন এবং প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠুন ।

বিনীত,

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়
সভাপতি, পরিবেশ আকাদেমি ॥
ফোন – 8420762517
ই-মেল – biswajit.envlaw@gmail.com

শংকর কুশারী
সম্পাদক, পরিবেশ আকাদেমি ॥
ফোন – 9433810055
ই-মেল – eskusari@gmail.com

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply