You are currently viewing সেই ট্র্যাডিশনের পথ ধরেই পরিবেশ এবং শ্রমজীবী মানুষ ব্রাত্যই থেকে গেলেন এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটেও

সেই ট্র্যাডিশনের পথ ধরেই পরিবেশ এবং শ্রমজীবী মানুষ ব্রাত্যই থেকে গেলেন এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটেও

Share this post

লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায় । এমত অবস্থায় ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের পরিবর্তে পেশ করা হল একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট । স্বাভাবিকভাবেই এই বাজেটে উল্লেখযোগ্য বা চমক সৃষ্টিকারী কোন বৈশিষ্ট্য ছিলো না । তারপরও যথারীতি বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে মাননীয়া কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর এই স্বল্প মেয়াদী বাজেট পেশ করলেন l টি.ভি. র চ্যানেলগুলিতে এই বাজেটকে নিয়ে আলোচনাসভা আয়োজিত হল । প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলে দাবি করলেন শাসকদল এবং যথারীতি বিরোধী দলগুলি বাজেটের সমালোচনা করলেন l এই নিন্দা ও স্তুতির স্রোতে শাসক বা বিরোধী দল কখনোই উচ্চারণ করলেন না যে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্রাত্য থেকে গেলো এই কেন্দ্রীয় বাজেটে l সেগুলি হল পরিবেশ এবং প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্ন l দেশের খেতে না পাওয়া প্রান্তিক, হতভাগ্য মানুষগুলির দুঃখ যন্ত্রণা লাঘবের জন্য কোন কথা উচ্চারিত হল না, একইভাবে অমীমাংসিত থেকে গেলো পরিবেশ বিষয়ক অত্যন্ত জরুরি বিষয়গুলিও ।

এই মুহূর্তে বিভিন্নধরনের দূষণ সংক্রান্ত সমস্যায় জর্জরিত ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামাঞ্চল l আক্রান্ত পরিবেশের বিষয়গুলি যথাক্রমে —

* ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত নদী দূষণ সমস্যায় আক্রান্ত l কেবলমাত্র উত্তর পূর্ব ভারতের কয়েকটি নদী ছাড়া সমস্ত নদীর জলই দূষণে আক্রান্ত l নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে, সুনির্দিষ্ট দপ্তর আছে কিন্তু তার কার্যকারিতা হতাশাজনক l নদীর নির্মলতাকে ফিরিয়ে আনতে বহু প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ জিজ্ঞাসা চিহ্নের মুখে l দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলাভূমিগুলির অবস্থাও তথৈবচ l

* ভারতবর্ষের এমন একটি শহরও চিহ্নিত করা যাবে না যে শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক নিয়ম মেনে চলছে l সমস্ত কঠিন ও তরল বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে l ফলত: দূষণ বেড়ে চলেছে উত্তরোত্তর । এই ব্যাপারেও সাম্প্রতিক বাজেটে বিশেষ উদ্বেগের চিহ্ন নেই ।

* ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি বড় বড় শহর বায়ুদূষণে আক্রান্ত l সাম্প্রতিক বাজেটে সবুজ উন্নয়নের রূপরেখার কথা বলা হয়েছে l এদিকে বাজেটে সবুজ উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষা আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে কার্যত: পরিবেশ বিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপকেই উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে l যেমন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী অরণ্য সম্পদকে ধ্বংস করে শিল্প তৈরির মহড়া চলছে ! অথচ আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সৌরশক্তির উৎপাদন বর্ধিত করা, যার মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে বাজেট নিশ্চুপ l এই কেন্দ্রীয় বাজেট যাঁরা তৈরি করেছেন সম্ভবতঃ তাঁরা ব্যস্ততার কারণে এই দেশে বর্তমানে প্রচলিত পরিবেশ আইনগুলি পড়ে দেখতে ভুলে গেছেন !

* পৃথিবীর অন্যতম জীববৈচিত্র্যময় দেশ ভারতবর্ষ l বিস্তৃত অরণ্য, জলাশয়, নদী, সমুদ্র নিয়ে এক অসামান্য জীববৈচিত্র্য আমাদের দেশে বিরাজ করে l কিন্তু এই জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা এবং তার উন্নয়ন করা বিষয়ে কোন বার্তা এই বাজেটের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়নি l ফলত: ভারতবর্ষের বিলীয়মান জীববৈচিত্র্য ক্রমশঃ আরো হারিয়ে যাবার পথে এগিয়ে চলেছে ।

পরিবেশের কথা বলতে গেলে শ্রমিকদের কথা না বলা অপরাধের সমান । পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম আন্তর্জাতিক শর্ত দারিদ্র্য দূরীকরণ ও পরিবেশ বান্ধব জীবনের মান উন্নয়ন । পৃথিবীর বৃহত্তম লিখিত ভারতীয় সংবিধানে এই ব্যাপারে নানা কথা লেখা থাকলেও দুর্ভাগ্যক্রমে বাজেট নির্মাতারা প্রায় ভুলেই গেলেন ভারতবর্ষের অগণিত শ্রমজীবী মানুষের কথা যাঁরা এই সভ্যতার অন্যতম ধারক ও বাহক ।

Ω মধ্যবিত্ত তথা উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের আয়করে পুনর্বিন্যাস নিয়ে যখন বাজেট বক্তৃতা হচ্ছে তখন লোকসভায় শাসকদলের মাননীয় সাংসদরা টেবিল চাপড়ে প্রশংসা করলেন । কিন্তু ওই মাননীয় সাংসদদের একবারও মনে হল না ভারতের অগণিত শ্রমজীবী মানুষের ই.পি.এফ. পেনশন মাত্র ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ । পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ সমিতি সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংস্থা বারংবার আবেদন করেছেন যাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম পেনশন ৫০০০ টাকা করা হয় । কিন্তু আজকের বাজেটে এই প্রসঙ্গ কোনরকমভাবেই উত্থাপিত হয়নি, যার অর্থ শ্রমজীবী মানুষদের ন্যূনতম পেনশন এবারেও বর্ধিত হল না ।

Ω ভারতীয় সংবিধানের নিয়মনীতি ধরে ভারতবর্ষের প্রত্যেক সক্ষম নাগরিকের বছরে ১০০ দিন কাজ পাবার অধিকার বর্তমান । কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ বছরে ১০০ দিন কাজ পান না কিংবা যদি বা পান সরকারি হারে মজুরি পান না । বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা যে কিভাবে বেঁচে থাকবেন সে ব্যাপারেও বাজেটে কোনরকম ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি । ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বুকে একটি আইন তৈরি হয়েছিল যার মাধ্যমে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা একটা ভাতা পেতে পারেন বা পেয়ে থাকেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ কেন্দ্রীয়ভাবে এই ধরনের কোন আইন চালু নেই যা বর্তমান প্রেক্ষিতে অত্যন্ত জরুরি ।

Ω করোনা কালে ভারতবর্ষ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখা সত্বেও কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন জীবিকাকে সুরক্ষিত রাখার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । তা ছাড়া শ্রমিকদের পেশাগত রোগ বিশেষ করে পাথর খাদানে কর্মরত সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত মানুষদের কথাও বাজেটে অনুচ্চারিত থেকে গেছে ।

নিতান্তই সাদামাটা এই বাজেটের মূলতঃ দুটি ঘোষণা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । প্রথমতঃ আধ্যাত্মিক পর্যটনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এর মধ্য দিয়ে এই বাজেটে সরকারের একটি “বিশেষ” চিন্তাভাবনার ছাপ পড়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে । দ্বিতীয়তঃ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সৌর শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির দিকে । এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েও আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন দিল্লিতে আয়োজিত জি ২০ সম্মেলনে থেকে পরিবেশ বিষয়ক যে ধরনের আশা ব্যঞ্জক ঘোষণা করা হয়েছিলো এই বাজেটে তার প্রায় কোন প্রতিফলনই দেখতে পাওয়া যায় নি ।

তবু আমরা আশায় আছি । কবিগুরুর ভাষাতেই বলতে হয় – “দারুণ বিপ্লব মাঝে, তব শঙ্খধ্বনি বাজে … নিদ্রিত ভারত জাগে ।”

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় (পরিবেশ ও সমাজকর্মী )
চলভাষ – ৮৪২০৭৬২৫১৭
ই-মেল – biswajit.envlaw@gmail.com

Disclaimer:

  • The views expressed in the articles which are published in this website (www.doverthinker.com) asserts that the opinions expressed in an article or any written material are those of the author and not the opinion of the website (www.doverthinker.com).
  • The www.doverthinker.com assumes no responsibility or liability for any error(s) or omission(s) in the content(s) and/or the article(s). The information contained in www.doverthinker.com is provided on an “as is” basis as provided by the author(s). 
  • All the information published in www.doverthinker.com is in good faith and for general information purpose only.
  • No warranties from our site will be given for the completeness, reliability and accuracy of the information in the published article'(s).

Share this post

Leave a Reply